ঢাকা ০৭:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ঘরবন্দি হাজারো মানুষ, আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে স্থানীয়রা

ফেনীতে মুহুরী-সিলোনিয়ার বাঁধে ভাঙন, ৯ গ্রাম পানির নিচে

ফেনীতে টানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের প্রভাবে মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর বাঁধের অন্তত দুটি অংশ ভেঙে পড়েছে। এতে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার অন্তত ৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। অনেক পরিবার এখনও পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পর ফুলগাজী উপজেলার বণিকপাড়া এলাকায় মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের প্রায় ৫০ মিটার অংশ ভেঙে যায়। এ সময় নদীর প্রবল স্রোতে মুহূর্তেই পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। একই রাতে সিলোনিয়া নদীর গোসাইপুর এলাকায় বেড়িবাঁধের একটি অংশেও ভাঙন দেখা দেয়।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল কাশেম বলেন, “টানা মুষলধারে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে মুহুরী, সিলোনিয়া এবং কহুয়া নদীর পানির চাপ অনেক বেড়ে যায়। সেই চাপেই বেড়িবাঁধ ভেঙেছে।”

ভাঙনের ফলে ফুলগাজী উপজেলার উত্তর বড়ইয়া, দক্ষিণ বড়ইয়া, বনিপাড়া, বিজয়পুর, বসন্তপুর, জগৎপুর, গোসাইপুর, নীলক্ষী ও করইয়া- এই ৯টি গ্রামে পানি ঢুকে পড়ে।

স্থানীয় বাসিন্দা সঞ্জীব বণিক বলেন, “বৃহস্পতিবার রাত থেকেই পানি ঘরে ঢুকেছে। শিশুসহ সবাই ঘরের মধ্যে পানিবন্দি। আসবাবপত্র ডুবে গেছে, রান্নাও করতে পারছি না। পুকুরের মাছও ভেসে গেছে।”

শাহাবুদ্দিন নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, “আগে থেকেই আমরা বলছিলাম বাঁধ দুর্বল হয়ে পড়েছে। কিন্তু কার্যকর কোনো ব্যবস্থা হয়নি। এখন তো ভয়াবহ অবস্থা।”

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফুলগাজী বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মুহুরী নদীর পানি গার্ডওয়াল উপচে বাজারে ঢুকে পড়ে। ফলে রাতভর বাজার ছিল হাঁটুপানিতে নিমজ্জিত। তবে শুক্রবার ভোর থেকে পানি কিছুটা নামতে শুরু করেছে।

পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের সুবার বাজার সংলগ্ন মনিপুর গ্রামে গত বছর ভাঙা চারটি অংশ দিয়েই এবারও হু হু করে পানি ঢুকছে। স্থানীয় মোহাম্মদ হাসান বলেন, “গত বছরের ভয়াবহ বন্যার পরও বাঁধ সংস্কার হয়নি। এখন আবার পানি ঢুকছে। পানি দেখলেই বুক ধড়ফড় করে।”

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য বলছে, গত বছর তিনটি নদীর বেড়িবাঁধে ৫২টি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছিল। তার মধ্যে অধিকাংশ বাঁধ মেরামত করা হলেও ১০–১২টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে এখনো সংস্কার হয়নি। সেখান দিয়েই পানি প্রবেশ করছে। এছাড়া সম্প্রতি সংস্কার করা আটটি বাঁধে নতুন করে ফাটল দেখা দিয়েছে।

ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহরিয়া ইসলাম বলেন, মুহুরী নদীর ভাঙনের খবর পেয়ে জেলা প্রশাসকসহ তিনি ঘটনাস্থলে যান। পানিবন্দী মানুষদের জন্য ফুলগাজী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়কে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী (পুর) ওয়াসিম আকরাম জানান, শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার নিচে রয়েছে। পানি প্রবাহিত হচ্ছে ১১ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার উচ্চতায়, যেখানে বিপদসীমা ১২ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, “মুহুরী বাঁধের যেটি ভেঙেছে, সেটি আরসিসি (রিইনফোর্সড সিমেন্ট কংক্রিট) ঢালাই করা ছিল। মাটির বাঁধের স্থায়িত্ব কম বলেই সেখানে আরসিসি ঢালাই করা হয়। কিন্তু সেটিও টিকলো না।”

জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, “ভাঙা অংশ দ্রুত মেরামতের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাঁধের অন্য অংশগুলো নজরদারিতে রাখা হয়েছে। মাটির বাঁধ হওয়ায় পানি বাড়লেই ঝুঁকি থেকে যায়।”

 

নতুনকথা/এএস

ঘরবন্দি হাজারো মানুষ, আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে স্থানীয়রা

ফেনীতে মুহুরী-সিলোনিয়ার বাঁধে ভাঙন, ৯ গ্রাম পানির নিচে

আপডেট সময় ১১:৪১:৪৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫

ফেনীতে টানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের প্রভাবে মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর বাঁধের অন্তত দুটি অংশ ভেঙে পড়েছে। এতে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার অন্তত ৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। অনেক পরিবার এখনও পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পর ফুলগাজী উপজেলার বণিকপাড়া এলাকায় মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের প্রায় ৫০ মিটার অংশ ভেঙে যায়। এ সময় নদীর প্রবল স্রোতে মুহূর্তেই পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। একই রাতে সিলোনিয়া নদীর গোসাইপুর এলাকায় বেড়িবাঁধের একটি অংশেও ভাঙন দেখা দেয়।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল কাশেম বলেন, “টানা মুষলধারে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে মুহুরী, সিলোনিয়া এবং কহুয়া নদীর পানির চাপ অনেক বেড়ে যায়। সেই চাপেই বেড়িবাঁধ ভেঙেছে।”

ভাঙনের ফলে ফুলগাজী উপজেলার উত্তর বড়ইয়া, দক্ষিণ বড়ইয়া, বনিপাড়া, বিজয়পুর, বসন্তপুর, জগৎপুর, গোসাইপুর, নীলক্ষী ও করইয়া- এই ৯টি গ্রামে পানি ঢুকে পড়ে।

স্থানীয় বাসিন্দা সঞ্জীব বণিক বলেন, “বৃহস্পতিবার রাত থেকেই পানি ঘরে ঢুকেছে। শিশুসহ সবাই ঘরের মধ্যে পানিবন্দি। আসবাবপত্র ডুবে গেছে, রান্নাও করতে পারছি না। পুকুরের মাছও ভেসে গেছে।”

শাহাবুদ্দিন নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, “আগে থেকেই আমরা বলছিলাম বাঁধ দুর্বল হয়ে পড়েছে। কিন্তু কার্যকর কোনো ব্যবস্থা হয়নি। এখন তো ভয়াবহ অবস্থা।”

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফুলগাজী বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মুহুরী নদীর পানি গার্ডওয়াল উপচে বাজারে ঢুকে পড়ে। ফলে রাতভর বাজার ছিল হাঁটুপানিতে নিমজ্জিত। তবে শুক্রবার ভোর থেকে পানি কিছুটা নামতে শুরু করেছে।

পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের সুবার বাজার সংলগ্ন মনিপুর গ্রামে গত বছর ভাঙা চারটি অংশ দিয়েই এবারও হু হু করে পানি ঢুকছে। স্থানীয় মোহাম্মদ হাসান বলেন, “গত বছরের ভয়াবহ বন্যার পরও বাঁধ সংস্কার হয়নি। এখন আবার পানি ঢুকছে। পানি দেখলেই বুক ধড়ফড় করে।”

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য বলছে, গত বছর তিনটি নদীর বেড়িবাঁধে ৫২টি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছিল। তার মধ্যে অধিকাংশ বাঁধ মেরামত করা হলেও ১০–১২টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে এখনো সংস্কার হয়নি। সেখান দিয়েই পানি প্রবেশ করছে। এছাড়া সম্প্রতি সংস্কার করা আটটি বাঁধে নতুন করে ফাটল দেখা দিয়েছে।

ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহরিয়া ইসলাম বলেন, মুহুরী নদীর ভাঙনের খবর পেয়ে জেলা প্রশাসকসহ তিনি ঘটনাস্থলে যান। পানিবন্দী মানুষদের জন্য ফুলগাজী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়কে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী (পুর) ওয়াসিম আকরাম জানান, শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার নিচে রয়েছে। পানি প্রবাহিত হচ্ছে ১১ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার উচ্চতায়, যেখানে বিপদসীমা ১২ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, “মুহুরী বাঁধের যেটি ভেঙেছে, সেটি আরসিসি (রিইনফোর্সড সিমেন্ট কংক্রিট) ঢালাই করা ছিল। মাটির বাঁধের স্থায়িত্ব কম বলেই সেখানে আরসিসি ঢালাই করা হয়। কিন্তু সেটিও টিকলো না।”

জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, “ভাঙা অংশ দ্রুত মেরামতের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাঁধের অন্য অংশগুলো নজরদারিতে রাখা হয়েছে। মাটির বাঁধ হওয়ায় পানি বাড়লেই ঝুঁকি থেকে যায়।”

 

নতুনকথা/এএস