ঢাকা ০১:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
সপ্তমবারের মতো ভাঙনের মুখে জাতীয় পার্টি: একা হয়ে যাচ্ছেন জিএম কাদের বৃহস্পতিবার শুরু হচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষা: অংশ নিচ্ছে ১২ লাখ ৫১ হাজার শিক্ষার্থী নিরাপত্তা বাহিনীর সামনেই ‘ওপেন সিক্রেট’ পাথর পাচার, আদায় হচ্ছে চাঁদাও কলম্বোতেও টস জিতে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ, একাদশে দুই পরিবর্তন আইএমএফের ১৩০ কোটি ডলার ঋণ পেল বাংলাদেশ: রিজার্ভ ফের ২৭ বিলিয়ন ডলারের ঘরে শুক্র-শনিবারও সেবা চালু, খুলে গেল ঢাকা দক্ষিণ সিটির সব অফিস বিদেশে এস আলম চেয়ারম্যান ও স্ত্রীর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ যুদ্ধের হাত থেকে মানবতাকে রক্ষা করতে বামপন্থীদের ঐক্য জরুরি ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ইরান হামলার বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ

আইএমএফের ১৩০ কোটি ডলার ঋণ পেল বাংলাদেশ: রিজার্ভ ফের ২৭ বিলিয়ন ডলারের ঘরে

বাংলাদেশ একসঙ্গে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে দুই কিস্তির ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ পেয়েছে। চলমান ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির আওতায় এটি তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তির অর্থ। মঙ্গলবার (২৪ জুন) এই অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে যুক্ত হওয়ায় গ্রোস রিজার্ভ ফের ২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, মঙ্গলবার দিন শেষে দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার গ্রোস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলারে। তবে আইএমএফের মানদণ্ড অনুযায়ী (বিপিএম ৬), এই রিজার্ভ দাঁড়ায় ২২ দশমিক ২৫ বিলিয়নে। ব্যয়যোগ্য বা ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ বর্তমানে রয়েছে প্রায় ১৭ বিলিয়ন ডলারে, যা দিয়ে তিন মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।

বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের বিভিন্ন স্তরের হিসাব রাখে। সাধারণত ‘গ্রোস রিজার্ভ’ মানে মোট রিজার্ভ, যার মধ্যে থাকে ব্যাংকগুলোর ক্লিয়ারিং হিসাব, এসডিআর (IMF-এর বিশেষ ড্রইং রাইটস) ও আকুর বিল। তবে ‘ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ’ হিসাব করা হয় এইসব অনুপযোগী অংশ বাদ দিয়ে। যদিও এই ব্যয়যোগ্য রিজার্ভের নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান বাংলাদেশ ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে না।

সূত্র জানায়, বর্তমানে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ প্রায় ১৭ বিলিয়ন ডলার। এ দিয়ে প্রতি মাসে গড়ে সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলারের আমদানি ব্যয় মেটানো হলে প্রায় তিন মাসের নিশ্চয়তা মিলবে, যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

এর আগে সোমবার রাতে ওয়াশিংটনে আইএমএফের প্রধান কার্যালয়ে নির্বাহী বোর্ডের বৈঠকে বাংলাদেশকে দেওয়া ঋণের তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের অনুমোদন দেওয়া হয়। এ কর্মসূচির আওতায় আইএমএফ বাংলাদেশকে মোট ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে, যার মধ্যে বর্ধিত ঋণ সহায়তা (ইসিএফ) ও বর্ধিত তহবিল সহায়তা (ইএফএফ) বাবদ ৩৩০ কোটি ডলার এবং রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ) বাবদ ১৪০ কোটি ডলার অন্তর্ভুক্ত।

উল্লেখযোগ্যভাবে, আরএসএফ তহবিল থেকে ঋণ পাওয়া বাংলাদেশই এশিয়ার মধ্যে প্রথম দেশ।

  • ১ম কিস্তি: ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি – ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার
  • ২য় কিস্তি: ২০২৩ সালের ডিসেম্বর – ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার
  • ৩য় ও ৪র্থ কিস্তি: ২০২৪ সালের জুন – ১১৫ কোটি ডলার ও ১৫ কোটি ডলার (মোট ১৩০ কোটি)

এই চার কিস্তিতে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত পেয়েছে মোট ২৩১ কোটি ডলার। বাকি রয়েছে ২৩৯ কোটি ডলার। পরবর্তী সময়ে আরও দুটি কিস্তির মাধ্যমে অবশিষ্ট অর্থ ছাড় করা হবে।

২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। কিন্তু করোনার পর আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া, বড় অঙ্কের বাণিজ্য ঘাটতি, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ এবং ডলারের বিপরীতে টাকার ক্রমাগত অবমূল্যায়ন- এসবের প্রভাবে রিজার্ভ দ্রুত হ্রাস পেতে থাকে।

সে সময় আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি, অর্থপাচার এবং দুর্বল আর্থিক ব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠলে, বাংলাদেশ আইএমএফের কাছে সহায়তা চায়। ২০২২ সালের জুলাইতে আইএমএফের কাছে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করা হয়। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে আইএমএফ।

আইএমএফ বলেছে, এই কর্মসূচি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা, দুর্বল জনগোষ্ঠীকে সহায়তা এবং টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হবে।

বিগত সরকারের সময় রিজার্ভ কমে গিয়ে ১৪ বিলিয়নের নিচে নেমে আসে ব্যয়যোগ্য অংশ। তখন বাংলাদেশ ব্যাংক বিদেশি ঋণ ও বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ডলার কিনে রিজার্ভ রক্ষায় চেষ্টা চালায়। তবে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে দায়িত্ব নেওয়া গভর্নরের অধীনে রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। এখন আর রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বরং বহুমুখী উৎস থেকে ডলার জোগান নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে। ফলে ধীরে ধীরে রিজার্ভ আবার বাড়ছে।

 

নতুনকথা/এএস

সপ্তমবারের মতো ভাঙনের মুখে জাতীয় পার্টি: একা হয়ে যাচ্ছেন জিএম কাদের

আইএমএফের ১৩০ কোটি ডলার ঋণ পেল বাংলাদেশ: রিজার্ভ ফের ২৭ বিলিয়ন ডলারের ঘরে

আপডেট সময় ১০:৫৪:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

বাংলাদেশ একসঙ্গে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে দুই কিস্তির ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ পেয়েছে। চলমান ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির আওতায় এটি তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তির অর্থ। মঙ্গলবার (২৪ জুন) এই অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে যুক্ত হওয়ায় গ্রোস রিজার্ভ ফের ২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, মঙ্গলবার দিন শেষে দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার গ্রোস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলারে। তবে আইএমএফের মানদণ্ড অনুযায়ী (বিপিএম ৬), এই রিজার্ভ দাঁড়ায় ২২ দশমিক ২৫ বিলিয়নে। ব্যয়যোগ্য বা ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ বর্তমানে রয়েছে প্রায় ১৭ বিলিয়ন ডলারে, যা দিয়ে তিন মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।

বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের বিভিন্ন স্তরের হিসাব রাখে। সাধারণত ‘গ্রোস রিজার্ভ’ মানে মোট রিজার্ভ, যার মধ্যে থাকে ব্যাংকগুলোর ক্লিয়ারিং হিসাব, এসডিআর (IMF-এর বিশেষ ড্রইং রাইটস) ও আকুর বিল। তবে ‘ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ’ হিসাব করা হয় এইসব অনুপযোগী অংশ বাদ দিয়ে। যদিও এই ব্যয়যোগ্য রিজার্ভের নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান বাংলাদেশ ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে না।

সূত্র জানায়, বর্তমানে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ প্রায় ১৭ বিলিয়ন ডলার। এ দিয়ে প্রতি মাসে গড়ে সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলারের আমদানি ব্যয় মেটানো হলে প্রায় তিন মাসের নিশ্চয়তা মিলবে, যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

এর আগে সোমবার রাতে ওয়াশিংটনে আইএমএফের প্রধান কার্যালয়ে নির্বাহী বোর্ডের বৈঠকে বাংলাদেশকে দেওয়া ঋণের তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের অনুমোদন দেওয়া হয়। এ কর্মসূচির আওতায় আইএমএফ বাংলাদেশকে মোট ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে, যার মধ্যে বর্ধিত ঋণ সহায়তা (ইসিএফ) ও বর্ধিত তহবিল সহায়তা (ইএফএফ) বাবদ ৩৩০ কোটি ডলার এবং রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ) বাবদ ১৪০ কোটি ডলার অন্তর্ভুক্ত।

উল্লেখযোগ্যভাবে, আরএসএফ তহবিল থেকে ঋণ পাওয়া বাংলাদেশই এশিয়ার মধ্যে প্রথম দেশ।

  • ১ম কিস্তি: ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি – ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার
  • ২য় কিস্তি: ২০২৩ সালের ডিসেম্বর – ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার
  • ৩য় ও ৪র্থ কিস্তি: ২০২৪ সালের জুন – ১১৫ কোটি ডলার ও ১৫ কোটি ডলার (মোট ১৩০ কোটি)

এই চার কিস্তিতে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত পেয়েছে মোট ২৩১ কোটি ডলার। বাকি রয়েছে ২৩৯ কোটি ডলার। পরবর্তী সময়ে আরও দুটি কিস্তির মাধ্যমে অবশিষ্ট অর্থ ছাড় করা হবে।

২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। কিন্তু করোনার পর আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া, বড় অঙ্কের বাণিজ্য ঘাটতি, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ এবং ডলারের বিপরীতে টাকার ক্রমাগত অবমূল্যায়ন- এসবের প্রভাবে রিজার্ভ দ্রুত হ্রাস পেতে থাকে।

সে সময় আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি, অর্থপাচার এবং দুর্বল আর্থিক ব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠলে, বাংলাদেশ আইএমএফের কাছে সহায়তা চায়। ২০২২ সালের জুলাইতে আইএমএফের কাছে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করা হয়। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে আইএমএফ।

আইএমএফ বলেছে, এই কর্মসূচি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা, দুর্বল জনগোষ্ঠীকে সহায়তা এবং টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হবে।

বিগত সরকারের সময় রিজার্ভ কমে গিয়ে ১৪ বিলিয়নের নিচে নেমে আসে ব্যয়যোগ্য অংশ। তখন বাংলাদেশ ব্যাংক বিদেশি ঋণ ও বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ডলার কিনে রিজার্ভ রক্ষায় চেষ্টা চালায়। তবে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে দায়িত্ব নেওয়া গভর্নরের অধীনে রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। এখন আর রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বরং বহুমুখী উৎস থেকে ডলার জোগান নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে। ফলে ধীরে ধীরে রিজার্ভ আবার বাড়ছে।

 

নতুনকথা/এএস