ঢাকা ০৯:৩৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৮ অগাস্ট ২০২৫, ২৪ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
রাজবাড়ী জেলা ওয়ার্কার্স পার্টি সাধারণ সম্পাদক কমরেড আরমান আলীর মৃত্যুতে ওয়ার্কার্স পার্টির শোক বীরমুক্তিযোদ্ধা মাহমুদুর রহমান বাবুর মৃত্যুতে ওয়ার্কার্স পার্টির শোক বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতদের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি পার্বত্য চুক্তি বাতিলের কথা ইতিহাস মুছে ফেলার আয়োজন। রাজনীতির নতুন মুখোশ, বামপন্থার বিভ্রান্তি ও ভবিষ্যতের সন্ধান চাঁদপুরে সিনিয়র যুব রেড ক্রিসেন্ট ফোরামের নতুন কমিটি গঠন কাবুলে আসন্ন পানি সংকট গোপালগঞ্জে জনতার ওপর গুলিবর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের প্রতিবাদে পুরান ঢাকায় বিএনপির বিক্ষোভ আবুল বারাকত এতদিন বাইরে ছিলেন সেটাই অনেক!

যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সিইসির সাক্ষাৎ: নির্বাচনী প্রস্তুতির গুরুত্বপূর্ণ সূচনা?

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ‘যমুনা’-তে অনুষ্ঠিত এই সাক্ষাৎকে ঘিরে রাজনৈতিক মহলে আলোচনার ঝড় উঠেছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সাক্ষাতের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও, আলোচনার নির্দিষ্ট বিস্তারিত জানায়নি। তবে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, এটি ছিল ‘ওয়ান-টু-ওয়ান’ বা একান্ত বৈঠক। বিশ্লেষকদের ধারণা, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে এই বৈঠক অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

সম্প্রতি লন্ডনে ড. ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার আলোচিত বৈঠকের পর নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা অনেকটাই প্রশমিত হয়েছে। বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপি একমত হয় যে, ২০২৬ সালের রোজার আগেই নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে। প্রথমদিকে বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দাবি করলেও, শেষ পর্যন্ত ফেব্রুয়ারির প্রথম ভাগে ভোটগ্রহণে একটি সমঝোতা গড়ে ওঠে।

যদিও তারেক রহমান বৈঠকে রোজার আগেই নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব দেন, তখন ড. ইউনূস জানান- সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে রোজার আগের সপ্তাহেও ভোট আয়োজন সম্ভব। এর মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা একদিকে নির্বাচন এগিয়ে আনার পক্ষেই অবস্থান নেন, অন্যদিকে প্রয়োজনীয় সংস্কার ও বিচার প্রক্রিয়া শেষ করার বিষয়েও জোর দেন।

এই সময়সীমা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান ছিল ভিন্ন।

  • বিএনপি চেয়েছিল ডিসেম্বরেই নির্বাচন।
  • জামায়াতে ইসলামী চাইছিল রোজার আগেই নির্বাচন হোক।
  • জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জোর দিচ্ছিল বিচার ও সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্নের ওপর।

এই ভিন্ন অবস্থানের মাঝে দাঁড়িয়ে প্রধান উপদেষ্টা গত ঈদের আগে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দেন। তবে এই সিদ্ধান্তে বিএনপি অসন্তোষ প্রকাশ করে, যার ফলে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে দলটির সম্পর্ক কিছুটা টানাপোড়েনে পড়ে। কিন্তু পরবর্তীতে লন্ডনের বৈঠক ও যৌথ সংবাদ সম্মেলনে উভয়পক্ষই জানিয়েছে- তারা আলোচনায় ‘সন্তুষ্ট’ এবং সম্মত।

এমতাবস্থায় সিইসি ও প্রধান উপদেষ্টার এই হঠাৎ সাক্ষাৎকে অনেকেই মনে করছেন নির্বাচন কার্যক্রম শুরুর দিকেই একটি বড় পদক্ষেপ। কারণ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের সম্পর্ক, সময় নির্ধারণ, মাঠ প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনী প্রস্তুত রাখাসহ নানা বিষয়েই সমন্বয় অপরিহার্য।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ‘একান্ত’ বৈঠক যেন নির্বাচন সামনে রেখে দৃশ্যমান প্রস্তুতির শুরু। এর মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশনের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে বলেও মত বিশ্লেষকদের। নির্বাচনের সময় নির্ধারণ নিয়ে যে অনিশ্চয়তা ও জল্পনা ছিল, তা অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে এই সাম্প্রতিক যোগাযোগগুলো।

যমুনায় সিইসি-প্রধান উপদেষ্টার এই সাক্ষাৎ শুধু সৌজন্য সাক্ষাৎ নয়- এটি একটি রাজনৈতিক বার্তা। যেখানে নির্বাচনের প্রস্তুতি, সময়সীমা, এবং সংস্কারের অগ্রগতি সবকিছুর দিকেই নজর দেওয়া হচ্ছে। দেশের মানুষ এখন চায় একটি গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। সেই লক্ষ্যে এই যোগাযোগগুলো যদি বাস্তব ভিত্তিতে রূপ নেয়, তাহলে ‘নতুন বাংলাদেশ’-এর যাত্রা হতে পারে আরও দৃঢ় এবং বিশ্বাসযোগ্য।

 

নতুনকথা/এএস

ট্যাগস :

রাজবাড়ী জেলা ওয়ার্কার্স পার্টি সাধারণ সম্পাদক কমরেড আরমান আলীর মৃত্যুতে ওয়ার্কার্স পার্টির শোক

যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সিইসির সাক্ষাৎ: নির্বাচনী প্রস্তুতির গুরুত্বপূর্ণ সূচনা?

আপডেট সময় ১১:১৮:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ‘যমুনা’-তে অনুষ্ঠিত এই সাক্ষাৎকে ঘিরে রাজনৈতিক মহলে আলোচনার ঝড় উঠেছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সাক্ষাতের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও, আলোচনার নির্দিষ্ট বিস্তারিত জানায়নি। তবে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, এটি ছিল ‘ওয়ান-টু-ওয়ান’ বা একান্ত বৈঠক। বিশ্লেষকদের ধারণা, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে এই বৈঠক অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

সম্প্রতি লন্ডনে ড. ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার আলোচিত বৈঠকের পর নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা অনেকটাই প্রশমিত হয়েছে। বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপি একমত হয় যে, ২০২৬ সালের রোজার আগেই নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে। প্রথমদিকে বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দাবি করলেও, শেষ পর্যন্ত ফেব্রুয়ারির প্রথম ভাগে ভোটগ্রহণে একটি সমঝোতা গড়ে ওঠে।

যদিও তারেক রহমান বৈঠকে রোজার আগেই নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব দেন, তখন ড. ইউনূস জানান- সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে রোজার আগের সপ্তাহেও ভোট আয়োজন সম্ভব। এর মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা একদিকে নির্বাচন এগিয়ে আনার পক্ষেই অবস্থান নেন, অন্যদিকে প্রয়োজনীয় সংস্কার ও বিচার প্রক্রিয়া শেষ করার বিষয়েও জোর দেন।

এই সময়সীমা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান ছিল ভিন্ন।

  • বিএনপি চেয়েছিল ডিসেম্বরেই নির্বাচন।
  • জামায়াতে ইসলামী চাইছিল রোজার আগেই নির্বাচন হোক।
  • জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জোর দিচ্ছিল বিচার ও সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্নের ওপর।

এই ভিন্ন অবস্থানের মাঝে দাঁড়িয়ে প্রধান উপদেষ্টা গত ঈদের আগে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দেন। তবে এই সিদ্ধান্তে বিএনপি অসন্তোষ প্রকাশ করে, যার ফলে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে দলটির সম্পর্ক কিছুটা টানাপোড়েনে পড়ে। কিন্তু পরবর্তীতে লন্ডনের বৈঠক ও যৌথ সংবাদ সম্মেলনে উভয়পক্ষই জানিয়েছে- তারা আলোচনায় ‘সন্তুষ্ট’ এবং সম্মত।

এমতাবস্থায় সিইসি ও প্রধান উপদেষ্টার এই হঠাৎ সাক্ষাৎকে অনেকেই মনে করছেন নির্বাচন কার্যক্রম শুরুর দিকেই একটি বড় পদক্ষেপ। কারণ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের সম্পর্ক, সময় নির্ধারণ, মাঠ প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনী প্রস্তুত রাখাসহ নানা বিষয়েই সমন্বয় অপরিহার্য।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ‘একান্ত’ বৈঠক যেন নির্বাচন সামনে রেখে দৃশ্যমান প্রস্তুতির শুরু। এর মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশনের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে বলেও মত বিশ্লেষকদের। নির্বাচনের সময় নির্ধারণ নিয়ে যে অনিশ্চয়তা ও জল্পনা ছিল, তা অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে এই সাম্প্রতিক যোগাযোগগুলো।

যমুনায় সিইসি-প্রধান উপদেষ্টার এই সাক্ষাৎ শুধু সৌজন্য সাক্ষাৎ নয়- এটি একটি রাজনৈতিক বার্তা। যেখানে নির্বাচনের প্রস্তুতি, সময়সীমা, এবং সংস্কারের অগ্রগতি সবকিছুর দিকেই নজর দেওয়া হচ্ছে। দেশের মানুষ এখন চায় একটি গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। সেই লক্ষ্যে এই যোগাযোগগুলো যদি বাস্তব ভিত্তিতে রূপ নেয়, তাহলে ‘নতুন বাংলাদেশ’-এর যাত্রা হতে পারে আরও দৃঢ় এবং বিশ্বাসযোগ্য।

 

নতুনকথা/এএস