জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বড় পরিবর্তন আনছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রার্থীদের প্রচারণায় পোস্টার ব্যবহার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরিবর্তে বিলবোর্ডকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে প্রচার উপকরণ হিসেবে।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে ইসির সপ্তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সকাল ১১টায় শুরু হয়ে প্রায় পৌনে চার ঘণ্টা এই বৈঠক চলে। এতে চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব আখতার আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, নির্বাচনী আচরণবিধিতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, “পোস্টার ব্যবহারের বিষয়টি বাদ দেওয়ার প্রস্তাব সংস্কার কমিশন থেকে এসেছিল। আমরা তাতে একমত হয়েছি। পোস্টার বাদ থাকছে, তবে বিলবোর্ড এই প্রথম অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। ব্যানার, ফেস্টুন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সংক্রান্ত বিষয়গুলোও নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।”
নতুন খসড়ায় দলীয় অঙ্গীকারনামা যুক্ত করা হয়েছে, যেখানে প্রতিটি দলকে তাদের প্রতিশ্রুতি স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে হবে। একই প্ল্যাটফর্মে সব প্রার্থীর ইশতেহার ঘোষণার ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে, যাতে ভোটাররা তুলনামূলকভাবে মূল্যায়ন করতে পারেন।
নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের শাস্তিও বাড়ানো হয়েছে। আগে যেখানে সর্বোচ্চ জরিমানা ছিল ৫০ হাজার টাকা, তা তিনগুণ বাড়িয়ে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব, অপপ্রচার বা আচরণবিধি লঙ্ঘন ঠেকাতে এবার বিশেষ নজরদারি থাকবে। এজন্য একটি মনিটরিং সেল গঠনের পরিকল্পনা করছে কমিশন।
আচরণবিধির খসড়ায় গুরুতর নির্বাচনী অপরাধের ক্ষেত্রে আরপিও’র ৯১ (ঙ) ধারা যুক্ত করা হয়েছে, যা আগে ছিল না। এর মাধ্যমে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের সুযোগ থাকছে।
নির্বাচনী সময়কালে প্রার্থীরা যাতে সরকারি সুযোগ-সুবিধা অপব্যবহার করতে না পারেন, সে লক্ষ্যে সার্কিট হাউস, ডাক বাংলো, রেস্ট হাউস ব্যবহারে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এসব সরকারি স্থাপনা এখন আর প্রচারণা বা দলীয় কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করা যাবে না।
সভায় জাতীয় সংসদের আসনসীমা পুনর্নির্ধারণ সংক্রান্ত আলোচনা হওয়ার কথা থাকলেও সময়ের অভাবে তা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি পরবর্তী বৈঠকে আলোচনার জন্য রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এই খসড়া আচরণবিধি চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ ও মতামত গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সবশেষে ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানান, নির্বাচনী প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ, সমান সুযোগসুবিধার ভিত্তিতে এবং পরিবেশবান্ধব করতে কমিশন এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে।
নতুুনকথা/এএস