ঢাকা ১২:৩০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১৮টি বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশ দ্রুত কার্যকর করতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ১৬ জুন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্যসচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া।

সভায় জানানো হয়, ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার জনআকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে বিভিন্ন সংস্কার কমিশন গঠন করে। এসব কমিশন ইতোমধ্যে সংবিধান সংশ্লিষ্ট বড় পরিবর্তন ও কাঠামোগত সংস্কারসহ ১২১টি বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাব সরকারের কাছে পেশ করেছে। এদের মধ্যে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১৮টি সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সভায় সিদ্ধান্ত হয়, যেসব সুপারিশ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগ প্রশাসনিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারে, সেগুলোর ওপর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ শুরু হবে। এরই অংশ হিসেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গত ২৫ মে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে চিঠি দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করে।

১৮টি প্রস্তাবের মধ্যে অগ্রাধিকার পাচ্ছে ৮টি

সভায় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১৮টি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্যে আটটি সুপারিশকে ‘সহজে ও দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হলো-
১. মহাসড়কের পেট্রোল পাম্পে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট স্থাপন
২. মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটকে ডায়নামিক করা
৩. কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠন
৪. বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিচালনা
৫. সরকারি দপ্তরে গণশুনানি চালু
৬. তথ্য অধিকার আইন ও অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট পর্যালোচনা ও সংশোধন
৭. বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পুনর্গঠন
৮. ডিজিটাল রূপান্তর ও ই-সেবা জোরদারকরণ

সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দেশের সব পেট্রোল ও সিএনজি পাম্পে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট স্থাপনে ২০ জুলাইয়ের মধ্যে সময়সীমা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বিষয়ে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ পেট্রোল পাম্প মালিকদের সঙ্গে সভা করে নির্দেশনা দেবে এবং জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন তদারকি করবে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগকে এক সপ্তাহের মধ্যে সব মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে হালনাগাদ তথ্য, নাগরিক মতামতের অপশন ও অন্যান্য ইন্টারঅ্যাকটিভ ফিচার সংযোজনের বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে। ন্যাশনাল ডাটা গভর্নেন্স ইন্টেরোপেরাবিলিটি আগামী দুই মাসের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ দুই দিনের মধ্যে ম্যানেজিং কমিটি গঠনের খসড়া নীতিমালা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তা ভেটিং করে পুনরায় পাঠানো হবে এবং পরবর্তী পাঁচ দিনের মধ্যে তা জারি করতে হবে। এক মাসের মধ্যে দেশব্যাপী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ম্যানেজিং কমিটি পুনর্গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনায় বেসরকারি সংস্থার সম্পৃক্ততা নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, এনজিওবিষয়ক ব্যুরোসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সভা করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

গণশুনানি কার্যক্রম চালুর জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করে একটি একক কৌশল নির্ধারণ করবে।

তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ এবং অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট-১৯২৩ এর যুগোপযোগী সংশোধনের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ পৃথক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে ‘বাংলাদেশ পরিসংখ্যান কমিশন’-এ রূপান্তরের জন্য বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় চলমান প্রকল্পের সঙ্গে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব সমন্বয় করে সময়াবদ্ধ পরিকল্পনা নিতে বলা হয়েছে।

তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগ সরকার পরিচালিত সব ডিজিটাল সেবা এক প্ল্যাটফর্মে আনতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে। আগামী এক মাসের মধ্যে সব মন্ত্রণালয় নিজ নিজ সময়সীমা নির্ধারণ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রতিবেদন দেবে।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিবের তত্ত্বাবধানে ‘গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিট (জিআইইউ)’র আওতায় একটি তদারকি টিম গঠন করা হবে। এই টিম মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করবে এবং প্রয়োজনে সহায়তা প্রদান করবে। পাশাপাশি, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ পুরো সংস্কার কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করবে।

সভায় জানানো হয়, পর্যায়ক্রমে অন্যান্য সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের জন্যও এ ধরনের সভা নিয়মিত আয়োজন করা হবে। এছাড়া গত কয়েক মাসে সরকার ৫৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে এক হাজার ৬১টি সংস্কার ও উন্নয়নমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

 

নতুনকথা/এএস

 

আইএমএফের ১৩০ কোটি ডলার ঋণ পেল বাংলাদেশ: রিজার্ভ ফের ২৭ বিলিয়ন ডলারের ঘরে

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত

আপডেট সময় ০৪:৩৯:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১৮টি বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশ দ্রুত কার্যকর করতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ১৬ জুন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্যসচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া।

সভায় জানানো হয়, ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার জনআকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে বিভিন্ন সংস্কার কমিশন গঠন করে। এসব কমিশন ইতোমধ্যে সংবিধান সংশ্লিষ্ট বড় পরিবর্তন ও কাঠামোগত সংস্কারসহ ১২১টি বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাব সরকারের কাছে পেশ করেছে। এদের মধ্যে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১৮টি সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সভায় সিদ্ধান্ত হয়, যেসব সুপারিশ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগ প্রশাসনিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারে, সেগুলোর ওপর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ শুরু হবে। এরই অংশ হিসেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গত ২৫ মে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে চিঠি দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করে।

১৮টি প্রস্তাবের মধ্যে অগ্রাধিকার পাচ্ছে ৮টি

সভায় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১৮টি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্যে আটটি সুপারিশকে ‘সহজে ও দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হলো-
১. মহাসড়কের পেট্রোল পাম্পে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট স্থাপন
২. মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটকে ডায়নামিক করা
৩. কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠন
৪. বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিচালনা
৫. সরকারি দপ্তরে গণশুনানি চালু
৬. তথ্য অধিকার আইন ও অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট পর্যালোচনা ও সংশোধন
৭. বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পুনর্গঠন
৮. ডিজিটাল রূপান্তর ও ই-সেবা জোরদারকরণ

সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দেশের সব পেট্রোল ও সিএনজি পাম্পে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট স্থাপনে ২০ জুলাইয়ের মধ্যে সময়সীমা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বিষয়ে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ পেট্রোল পাম্প মালিকদের সঙ্গে সভা করে নির্দেশনা দেবে এবং জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন তদারকি করবে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগকে এক সপ্তাহের মধ্যে সব মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে হালনাগাদ তথ্য, নাগরিক মতামতের অপশন ও অন্যান্য ইন্টারঅ্যাকটিভ ফিচার সংযোজনের বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে। ন্যাশনাল ডাটা গভর্নেন্স ইন্টেরোপেরাবিলিটি আগামী দুই মাসের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ দুই দিনের মধ্যে ম্যানেজিং কমিটি গঠনের খসড়া নীতিমালা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তা ভেটিং করে পুনরায় পাঠানো হবে এবং পরবর্তী পাঁচ দিনের মধ্যে তা জারি করতে হবে। এক মাসের মধ্যে দেশব্যাপী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ম্যানেজিং কমিটি পুনর্গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনায় বেসরকারি সংস্থার সম্পৃক্ততা নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, এনজিওবিষয়ক ব্যুরোসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সভা করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

গণশুনানি কার্যক্রম চালুর জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করে একটি একক কৌশল নির্ধারণ করবে।

তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ এবং অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট-১৯২৩ এর যুগোপযোগী সংশোধনের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ পৃথক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে ‘বাংলাদেশ পরিসংখ্যান কমিশন’-এ রূপান্তরের জন্য বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় চলমান প্রকল্পের সঙ্গে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব সমন্বয় করে সময়াবদ্ধ পরিকল্পনা নিতে বলা হয়েছে।

তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগ সরকার পরিচালিত সব ডিজিটাল সেবা এক প্ল্যাটফর্মে আনতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে। আগামী এক মাসের মধ্যে সব মন্ত্রণালয় নিজ নিজ সময়সীমা নির্ধারণ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রতিবেদন দেবে।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিবের তত্ত্বাবধানে ‘গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিট (জিআইইউ)’র আওতায় একটি তদারকি টিম গঠন করা হবে। এই টিম মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করবে এবং প্রয়োজনে সহায়তা প্রদান করবে। পাশাপাশি, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ পুরো সংস্কার কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করবে।

সভায় জানানো হয়, পর্যায়ক্রমে অন্যান্য সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের জন্যও এ ধরনের সভা নিয়মিত আয়োজন করা হবে। এছাড়া গত কয়েক মাসে সরকার ৫৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে এক হাজার ৬১টি সংস্কার ও উন্নয়নমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

 

নতুনকথা/এএস