ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসন চলতে থাকলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসবে না—এমন কঠোর অবস্থান জানিয়েছে ইরান। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আইআরএনএ-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমেরিকানরা বারবার আলোচনা চেয়েছে, বার্তা পাঠিয়েছে। কিন্তু আমরা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছি, আগ্রাসন বন্ধ না হলে কোনো আলোচনার প্রশ্নই আসে না। তারা এ অপরাধের অংশীদার। আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারি না।”
ইসরায়েল-ইরান সংঘাত অষ্টম দিনে গড়িয়েছে আজ শুক্রবার। এরই মধ্যে প্রথমবারের মতো পশ্চিমা দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মুখোমুখি আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। জেনেভায় অনুষ্ঠিতব্য এই বৈঠকে ইউরোপীয় দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে আরাঘচির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।
এ বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি, ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ-নোয়েল বারো এবং জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী থমাস মাইটজিয়ে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান কাজা কালাসও বৈঠকে অংশ নেবেন বলে নিশ্চিত করেছে কূটনৈতিক সূত্র।
বিশ্লেষকদের মতে, এক সপ্তাহ ধরে চলা সংঘাতের প্রেক্ষাপটে এই বৈঠক পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের সরাসরি আলোচনার নতুন দ্বার খুলতে পারে। আলোচনার মূল এজেন্ডা হতে পারে ইরানকে আলোচনার টেবিলে ফিরিয়ে আনা এবং তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কার্যক্রমে লাগাম টানা।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বারো বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, ইরানকে তার আক্রমণাত্মক পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি থেকে স্থায়ীভাবে পিছিয়ে আনা।”
এদিকে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যামি এক্সে দেওয়া বিবৃতিতে বলেছেন, “মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতি এখনই থামাতে হবে। এই অস্থিরতা কারও জন্যই সুফল বয়ে আনবে না। এখনই সময় সঠিক কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়ার।”
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে এক বৈঠকে ল্যামি বলেন, “ইরান কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারবে না। আমরা এই সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের বিষয়ে আলোচনা করেছি। আশা করছি, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই কূটনৈতিক সমাধানের কিছু অগ্রগতি হবে।”
তবে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপ ঘিরে। গত কয়েকদিন ধরেই মার্কিন সংবাদমাধ্যমে খবর আসছিল, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে সামরিক হামলার পরিকল্পনা অনুমোদন দিয়েছেন। যদিও তিনি এই খবর সরাসরি অস্বীকার করেছেন।
হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট সাংবাদিকদের জানান, “মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি অংশগ্রহণের বিষয়ে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন।”
ট্রাম্প নিজেও এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, “ইরানের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে, আবার নাও হতে পারে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দুই সপ্তাহের মধ্যে বিষয়টি চূড়ান্ত করব। আমি যা করব, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে এটুকু বলা যায়, ইরান এখন বড় সমস্যায় আছে এবং তারা আলোচনায় ফিরতে চায়।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা যত বাড়ছে, কূটনৈতিক ব্যর্থতা ও সংঘাতময় পরিণতির আশঙ্কাও ততই প্রবল হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে জেনেভায় অনুষ্ঠিতব্য বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে পারে, যদি পক্ষগুলো সমঝোতার পথে এগোতে রাজি হয়। এখন দেখার বিষয়, কূটনৈতিক ভাষ্য বাস্তবতার চাপে টিকে থাকে কি না।
নতুনকথা/এএস