ঢাকা ১২:০১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

ইসরায়েলের হামলায় বদলে গেল ইরানের জনমত?

গত কয়েক বছরে ইরানে জনঅসন্তোষ ও রাজনৈতিক অস্থিরতা ক্রমেই বেড়েছে। ২০২২ সালের ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’ আন্দোলনের মতো বিশাল গণবিক্ষোভ ছিল ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু সাম্প্রতিক ইসরায়েলি হামলা ও উত্তেজনাপূর্ণ কর্মকাণ্ড এই রাজনৈতিক সমীকরণে এক নতুন বাঁক এনেছে।

আলজাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ন্যাশনাল ইরানিয়ান আমেরিকান কাউন্সিল (NIAC)-এর প্রেসিডেন্ট জামাল আবদি বলেন, “ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসন ইরানে সরকার পরিবর্তনের সম্ভাবনাকেই পাল্টে দিয়েছে।” তিনি আরও বলেন, যেসব ইরানি আগে সরকারের কঠোর সমালোচক ছিলেন, তারা এখন সরকারের পাশে দাঁড়াতে বাধ্য হচ্ছেন, কারণ বাইরের হুমকির মুখে জাতীয় ঐক্যই বড় হয়ে উঠছে।

জামাল আবদির মতে, নেতানিয়াহুর এই কৌশল ছিল মারাত্মক ভুল। তিনি বলেন, “ইরানের জনগণের সরকার নিয়ে অভিযোগ যথেষ্ট ছিল। কিন্তু এই মুহূর্তে যে পরিমাণে বাইরের হস্তক্ষেপ এবং যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, তা ইরানিদের জাতীয়তাবোধকে আবার উসকে দিয়েছে। এখন জনগণ মনে করছে, সরকার যতই দুর্বল বা দুর্নীতিগ্রস্ত হোক, বাইরের শক্তির হাতে ইরান ধ্বংস হলে সবারই ক্ষতি।”

তিনি তুলে ধরেন, ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরেই মনস্তাত্ত্বিক কৌশলের মাধ্যমে ইরানি জনগণকে নিজেদের সরকারের বিরুদ্ধে উসকাতে চেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রকেও এ কাজে ব্যবহার করার প্রচেষ্টা ছিল। কিন্তু বাস্তবে, এই সামরিক আগ্রাসন উল্টো ইরানিদের মধ্যে প্রতিরোধ ও ঐক্য গড়ে তুলছে।

এক সময় প্রবাসী ইরানিদের অনেকেই বিশ্বাস করতেন, ইসরায়েল কেবলমাত্র ইসলামিক সরকারের স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্য করেই হামলা চালাবে, সাধারণ মানুষ এর বাইরে থাকবে। ফলে কিছু প্রবাসী ইসরায়েলি হামলার পক্ষে সমর্থনও জানাতেন। তবে আজ তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতেও এসেছে বড় পরিবর্তন।

জামাল আবদি বলেন, “নেতানিয়াহু এখন যে ভাষায় কথা বলছেন, তা ভয়ংকর। তিনি বলছেন, তেহরানকে ‘বৈরুত বানিয়ে ফেলতে হবে’। এই বার্তায় খুব স্পষ্ট হয়ে গেছে, লক্ষ্য শুধু সরকারের পতন নয়, পুরো ইরানকেই অস্থির করে দেওয়া।”

এই পরিস্থিতিতে, যারা আগে ভাবতেন ইসরায়েল কোনোভাবে ইরানিদের মুক্তির পথ দেখাবে, এখন তারা গভীরভাবে শঙ্কিত। কারণ গাজা, লেবানন, বা অন্যান্য অঞ্চলে যেভাবে ধ্বংস নেমে এসেছে, সেই ছায়া এখন ইরানেও পড়তে শুরু করেছে।

ইরানে রাজনৈতিক সংস্কার ও সরকারের পরিবর্তনের দাবি একেবারে অমূলক নয়। দীর্ঘদিন ধরে দমন-পীড়ন, অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও ব্যক্তিস্বাধীনতার সীমাবদ্ধতায় জনগণের অসন্তোষ সঞ্চিত হয়েছে। কিন্তু বাইরের আগ্রাসন যখন এই দাবিকে ছাপিয়ে যায়, তখন জনগণ আর বিরোধী থাকে না- তারা দেশপ্রেমিক হয়ে ওঠে।
এই বাস্তবতা এখন ইরানে প্রকট।

ইসরায়েল কিংবা যুক্তরাষ্ট্র যদি সত্যিই ইরানে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা দেখতে চায়, তবে সামরিক কৌশল নয়- চাই কূটনৈতিক সংলাপ, জনগণের অভ্যন্তরীণ দাবির প্রতি সম্মান এবং আগ্রাসনবিহীন আন্তর্জাতিক সমর্থন।

 

নতুন কথা/এএস

আইএমএফের ১৩০ কোটি ডলার ঋণ পেল বাংলাদেশ: রিজার্ভ ফের ২৭ বিলিয়ন ডলারের ঘরে

ইসরায়েলের হামলায় বদলে গেল ইরানের জনমত?

আপডেট সময় ০৬:৪৯:৩৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫

গত কয়েক বছরে ইরানে জনঅসন্তোষ ও রাজনৈতিক অস্থিরতা ক্রমেই বেড়েছে। ২০২২ সালের ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’ আন্দোলনের মতো বিশাল গণবিক্ষোভ ছিল ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু সাম্প্রতিক ইসরায়েলি হামলা ও উত্তেজনাপূর্ণ কর্মকাণ্ড এই রাজনৈতিক সমীকরণে এক নতুন বাঁক এনেছে।

আলজাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ন্যাশনাল ইরানিয়ান আমেরিকান কাউন্সিল (NIAC)-এর প্রেসিডেন্ট জামাল আবদি বলেন, “ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসন ইরানে সরকার পরিবর্তনের সম্ভাবনাকেই পাল্টে দিয়েছে।” তিনি আরও বলেন, যেসব ইরানি আগে সরকারের কঠোর সমালোচক ছিলেন, তারা এখন সরকারের পাশে দাঁড়াতে বাধ্য হচ্ছেন, কারণ বাইরের হুমকির মুখে জাতীয় ঐক্যই বড় হয়ে উঠছে।

জামাল আবদির মতে, নেতানিয়াহুর এই কৌশল ছিল মারাত্মক ভুল। তিনি বলেন, “ইরানের জনগণের সরকার নিয়ে অভিযোগ যথেষ্ট ছিল। কিন্তু এই মুহূর্তে যে পরিমাণে বাইরের হস্তক্ষেপ এবং যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, তা ইরানিদের জাতীয়তাবোধকে আবার উসকে দিয়েছে। এখন জনগণ মনে করছে, সরকার যতই দুর্বল বা দুর্নীতিগ্রস্ত হোক, বাইরের শক্তির হাতে ইরান ধ্বংস হলে সবারই ক্ষতি।”

তিনি তুলে ধরেন, ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরেই মনস্তাত্ত্বিক কৌশলের মাধ্যমে ইরানি জনগণকে নিজেদের সরকারের বিরুদ্ধে উসকাতে চেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রকেও এ কাজে ব্যবহার করার প্রচেষ্টা ছিল। কিন্তু বাস্তবে, এই সামরিক আগ্রাসন উল্টো ইরানিদের মধ্যে প্রতিরোধ ও ঐক্য গড়ে তুলছে।

এক সময় প্রবাসী ইরানিদের অনেকেই বিশ্বাস করতেন, ইসরায়েল কেবলমাত্র ইসলামিক সরকারের স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্য করেই হামলা চালাবে, সাধারণ মানুষ এর বাইরে থাকবে। ফলে কিছু প্রবাসী ইসরায়েলি হামলার পক্ষে সমর্থনও জানাতেন। তবে আজ তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতেও এসেছে বড় পরিবর্তন।

জামাল আবদি বলেন, “নেতানিয়াহু এখন যে ভাষায় কথা বলছেন, তা ভয়ংকর। তিনি বলছেন, তেহরানকে ‘বৈরুত বানিয়ে ফেলতে হবে’। এই বার্তায় খুব স্পষ্ট হয়ে গেছে, লক্ষ্য শুধু সরকারের পতন নয়, পুরো ইরানকেই অস্থির করে দেওয়া।”

এই পরিস্থিতিতে, যারা আগে ভাবতেন ইসরায়েল কোনোভাবে ইরানিদের মুক্তির পথ দেখাবে, এখন তারা গভীরভাবে শঙ্কিত। কারণ গাজা, লেবানন, বা অন্যান্য অঞ্চলে যেভাবে ধ্বংস নেমে এসেছে, সেই ছায়া এখন ইরানেও পড়তে শুরু করেছে।

ইরানে রাজনৈতিক সংস্কার ও সরকারের পরিবর্তনের দাবি একেবারে অমূলক নয়। দীর্ঘদিন ধরে দমন-পীড়ন, অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও ব্যক্তিস্বাধীনতার সীমাবদ্ধতায় জনগণের অসন্তোষ সঞ্চিত হয়েছে। কিন্তু বাইরের আগ্রাসন যখন এই দাবিকে ছাপিয়ে যায়, তখন জনগণ আর বিরোধী থাকে না- তারা দেশপ্রেমিক হয়ে ওঠে।
এই বাস্তবতা এখন ইরানে প্রকট।

ইসরায়েল কিংবা যুক্তরাষ্ট্র যদি সত্যিই ইরানে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা দেখতে চায়, তবে সামরিক কৌশল নয়- চাই কূটনৈতিক সংলাপ, জনগণের অভ্যন্তরীণ দাবির প্রতি সম্মান এবং আগ্রাসনবিহীন আন্তর্জাতিক সমর্থন।

 

নতুন কথা/এএস