দেশে লাখো গৃহশ্রমিকের শ্রমের স্বীকৃতি নেই, নেই নিরাপত্তাও। অথচ নাগরিক জীবনের অগ্রহণযোগ্য নির্ভরতা রয়েছে তাদের ওপর। শ্রম আইন থেকে এই বিশাল শ্রমশক্তি এখনও বাদ- এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে জাতীয় গার্হ্যস্থ নারী শ্রমিক ইউনিয়ন।
আন্তর্জাতিক গৃহশ্রমিক দিবস উপলক্ষে সোমবার (১৬ জুন) রাজধানীর পল্টনে আয়োজিত সমাবেশে গৃহশ্রমিকদের শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্তি এবং আইএলও কনভেনশন ১৮৯ অনুসমর্থনের জোর দাবি জানান সংগঠনের নেতারা।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মমতাজ বেগম। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রম সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মুর্শিদা আখতার নাহার।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও উপদেষ্টা, প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা আবুল হোসাইন, উপদেষ্টা মোস্তফা আলমগীর রতন, সাবেক সভাপতি আমেনা বেগম, যুগ্ম সম্পাদক রেনু বেগম, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহানুর আক্তারসহ অনেকে।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে অবহেলিত ও বঞ্চিত শ্রমশক্তির নাম গৃহশ্রমিক, যাদের শ্রম ছাড়া শহুরে নাগরিক জীবন কল্পনাই করা যায় না। অথচ এই বিশাল সংখ্যক শ্রমিকের নেই কোনো আইনগত স্বীকৃতি বা সুরক্ষা। দেশের প্রায় ৯৫ শতাংশ গৃহশ্রমিকই নারী ও শিশু- যারা প্রতিনিয়ত নিপীড়ন ও অনিরাপত্তার মধ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
তারা বলেন, ২০১১ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ‘শোভন কাজ’ বিষয়ক কনভেনশন ১৮৯ গ্রহণ করলেও আজও বাংলাদেশ সরকার সেটি অনুসমর্থন করেনি। একইসাথে গৃহশ্রমিকদের জাতীয় শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এর ফলে প্রতিনিয়ত গৃহশ্রমিকরা নানাভাবে শোষণ, নির্যাতন ও দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।
বক্তারা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, প্রতি বছরই শতাধিক গৃহশ্রমিক অমানবিক নির্যাতনে মারা যান। সম্প্রতি ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় শিশু গৃহশ্রমিকদের ওপর শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কিন্তু আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় অধিকাংশ ঘটনার বিচার পায় না। ফলে পরিবারগুলো ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়।
সমাবেশে বক্তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি তিনটি প্রধান দাবি জানান:
গৃহশ্রমিকদের শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
আইএলও কনভেনশন ১৮৯ অনুসমর্থনের মাধ্যমে গৃহশ্রমিকদের অধিকারকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করতে হবে।
বাজেটে গৃহশ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা খাতে বিশেষ বরাদ্দ রাখতে হবে এবং তাদের জন্য একটি নিবন্ধনব্যবস্থা চালু করতে হবে।
সমাবেশ থেকে আরও ঘোষণা আসে যে, যদি এসব দাবি বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে জাতীয় গার্হ্যস্থ নারী শ্রমিক ইউনিয়ন বৃহত্তর আন্দোলনের দিকে যেতে বাধ্য হবে।
নতুন কথা/এমএএম/এএস