ঢাকা ০৫:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সুফিয়া কামালের ১১৪তম জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন

নারীমুক্তি, মানবাধিকার এবং সাংস্কৃতিক জাগরণের অগ্রদূত কবি সুফিয়া কামালের ১১৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভা, স্মারক বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বক্তারা তাঁর অনন্য ভূমিকা ও প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে গভীর আলোচনা করেছেন।

শুক্রবার (২০ জুন) বিকেলে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। সভাপতিত্ব করেন পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, আর সঞ্চালনায় ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক উম্মে সালমা বেগম।

এবারের স্মারক বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘সুফিয়া কামাল: বাধা পেরিয়ে নারীর অভিযাত্রা’। বক্তৃতা প্রদান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা। তিনি বলেন, “সুফিয়া কামাল শুধু কবি নন, তিনি এক জীবন্ত প্রতিরোধ, যিনি নারীর অধিকারের প্রশ্নে উচ্চকণ্ঠ ছিলেন। তাঁর জীবন আমাদের শিক্ষা দেয় কীভাবে ভয়কে জয় করে এগিয়ে যেতে হয়।”

অনুষ্ঠানে সুফিয়া কামাল সম্মাননা প্রদান করা হয় প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুন নবীকে। সম্মাননা গ্রহণ করে তিনি বলেন, “এই সম্মান আমার কাছে এক গর্বের স্মৃতি হয়ে থাকবে। সুফিয়া খালাম্মার চিন্তা আমাকে বারবার অনুপ্রাণিত করেছে। তাঁর স্বপ্নকেই রূপ দিতে চেয়েছি আমার শিল্পকর্মে।”

অনুষ্ঠানের শুরুতে সুফিয়া কামালের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন অতিথিবৃন্দ ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এরপর জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং কণ্ঠশীলনের শিল্পীদের যৌথ আবৃত্তিতে শুরু হয় সাংস্কৃতিক আয়োজন।

সঙ্গীত পরিবেশন করেন খ্যাতিমান রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ইফ্ফাত আরা দেওয়ান, এ. এম. এম. মহীউজ্জামান চৌধুরী (ময়না), এবং ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা। আবৃত্তি পরিবেশন করেন কণ্ঠশীলনের শিল্পীরা।

ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, “সুফিয়া কামালের সাহসকে সঙ্গী করে আমরা যে সমতাভিত্তিক সমাজের স্বপ্ন দেখেছি, সেই যাত্রা এখনো চলমান। তিনি বহু আগেই বলেছিলেন নারীর সংগ্রামে সব শ্রেণিকে যুক্ত করার কথা- এখন সেটিই আমাদের বৈশ্বিক বাস্তবতায় বড় প্রেরণা।”

তিনি আরও বলেন, নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন, সমাজে নারী-পুরুষের সমতা এবং পিতৃতন্ত্রবিরোধী আন্দোলনে পুরুষদেরও সঙ্গে নিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে সবাইকে একসঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে।

সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু তাঁর বক্তব্যে বলেন, সুফিয়া কামাল ছিলেন বিশ শতকের নারী মুক্তি ও মানবমুক্তির আন্দোলনের এক সাহসী পথিকৃৎ। সমাজ সচেতন মানবতাবাদী লেখক হিসেবে তিনি বৈষম্য, সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তাঁর রেখে যাওয়া মশাল এখনও আমাদের পথ দেখায়।

স্মারক বক্তৃতায় ড. সামিনা লুৎফা বলেন, ২০২৫ সালের এই সময়ে এসেও আমরা দেখছি নারীর আগের অনেক অর্জন আবার হুমকির মুখে। ডিজিটাল যুগে নারীর প্রবেশাধিকার, সহিংসতা নিরসন, সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণ এবং পরিবেশগত ন্যায্যতার জন্য আমাদের আরও সোচ্চার হতে হবে। তিনি নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বরকে দমিয়ে রাখার রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় ও মহানগর কমিটির নেত্রীবৃন্দ, সম্পাদকমণ্ডলী, সাংগঠনিক কর্মীরা, গণমাধ্যমকর্মীসহ প্রায় ২৫০ জনের বেশি অতিথি। সকলেই কবি সুফিয়া কামালের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশ করেন এবং তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে নতুন সমাজ বিনির্মাণে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

 

নতুনকথা/এএস

সুফিয়া কামালের ১১৪তম জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন

আপডেট সময় ১২:১৪:১৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

নারীমুক্তি, মানবাধিকার এবং সাংস্কৃতিক জাগরণের অগ্রদূত কবি সুফিয়া কামালের ১১৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভা, স্মারক বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বক্তারা তাঁর অনন্য ভূমিকা ও প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে গভীর আলোচনা করেছেন।

শুক্রবার (২০ জুন) বিকেলে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। সভাপতিত্ব করেন পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, আর সঞ্চালনায় ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক উম্মে সালমা বেগম।

এবারের স্মারক বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘সুফিয়া কামাল: বাধা পেরিয়ে নারীর অভিযাত্রা’। বক্তৃতা প্রদান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা। তিনি বলেন, “সুফিয়া কামাল শুধু কবি নন, তিনি এক জীবন্ত প্রতিরোধ, যিনি নারীর অধিকারের প্রশ্নে উচ্চকণ্ঠ ছিলেন। তাঁর জীবন আমাদের শিক্ষা দেয় কীভাবে ভয়কে জয় করে এগিয়ে যেতে হয়।”

অনুষ্ঠানে সুফিয়া কামাল সম্মাননা প্রদান করা হয় প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুন নবীকে। সম্মাননা গ্রহণ করে তিনি বলেন, “এই সম্মান আমার কাছে এক গর্বের স্মৃতি হয়ে থাকবে। সুফিয়া খালাম্মার চিন্তা আমাকে বারবার অনুপ্রাণিত করেছে। তাঁর স্বপ্নকেই রূপ দিতে চেয়েছি আমার শিল্পকর্মে।”

অনুষ্ঠানের শুরুতে সুফিয়া কামালের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন অতিথিবৃন্দ ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এরপর জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং কণ্ঠশীলনের শিল্পীদের যৌথ আবৃত্তিতে শুরু হয় সাংস্কৃতিক আয়োজন।

সঙ্গীত পরিবেশন করেন খ্যাতিমান রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ইফ্ফাত আরা দেওয়ান, এ. এম. এম. মহীউজ্জামান চৌধুরী (ময়না), এবং ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা। আবৃত্তি পরিবেশন করেন কণ্ঠশীলনের শিল্পীরা।

ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, “সুফিয়া কামালের সাহসকে সঙ্গী করে আমরা যে সমতাভিত্তিক সমাজের স্বপ্ন দেখেছি, সেই যাত্রা এখনো চলমান। তিনি বহু আগেই বলেছিলেন নারীর সংগ্রামে সব শ্রেণিকে যুক্ত করার কথা- এখন সেটিই আমাদের বৈশ্বিক বাস্তবতায় বড় প্রেরণা।”

তিনি আরও বলেন, নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন, সমাজে নারী-পুরুষের সমতা এবং পিতৃতন্ত্রবিরোধী আন্দোলনে পুরুষদেরও সঙ্গে নিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে সবাইকে একসঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে।

সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু তাঁর বক্তব্যে বলেন, সুফিয়া কামাল ছিলেন বিশ শতকের নারী মুক্তি ও মানবমুক্তির আন্দোলনের এক সাহসী পথিকৃৎ। সমাজ সচেতন মানবতাবাদী লেখক হিসেবে তিনি বৈষম্য, সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তাঁর রেখে যাওয়া মশাল এখনও আমাদের পথ দেখায়।

স্মারক বক্তৃতায় ড. সামিনা লুৎফা বলেন, ২০২৫ সালের এই সময়ে এসেও আমরা দেখছি নারীর আগের অনেক অর্জন আবার হুমকির মুখে। ডিজিটাল যুগে নারীর প্রবেশাধিকার, সহিংসতা নিরসন, সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণ এবং পরিবেশগত ন্যায্যতার জন্য আমাদের আরও সোচ্চার হতে হবে। তিনি নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বরকে দমিয়ে রাখার রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় ও মহানগর কমিটির নেত্রীবৃন্দ, সম্পাদকমণ্ডলী, সাংগঠনিক কর্মীরা, গণমাধ্যমকর্মীসহ প্রায় ২৫০ জনের বেশি অতিথি। সকলেই কবি সুফিয়া কামালের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশ করেন এবং তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে নতুন সমাজ বিনির্মাণে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

 

নতুনকথা/এএস