কুমিল্লার মুরাদনগরে সংখ্যালঘু এক নারীকে বর্বরোচিত ধর্ষণ এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর চলমান সহিংসতা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ নারী মঞ্চ। সংগঠনটি বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক প্রতিবাদী নারী সমাবেশ ও র্যালিতে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায়।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট জোবায়দা পারভীন। বক্তব্য রাখেন নারী মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেত্রী মুর্শিদা আখতার নাহার, শিউলি শিকদার, শেখ সাহানাজ, সাহানা ফেরদৌসি লাকি, অ্যাডভোকেট ইশরাত জাহান, জোছনা আক্তার এবং মমতাজ বেগম।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, “মুরাদনগরের ঘটনায় আমরা শুধু একজন নির্যাতিতার কান্না শুনছি না, আমরা দেখতে পাচ্ছি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার এক নির্মম ব্যর্থতা। ঘরের দরজা ভেঙে ধর্ষণ এবং সেই দৃশ্য ভিডিও করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া—এটি কেবল একজন নারীর ওপর নির্যাতন নয়, এটি গোটা নারী সমাজের অস্তিত্বে আঘাত। রাষ্ট্রকে এর জবাবদিহি করতেই হবে।”
নারী মঞ্চের নেতারা জানান, দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি, উপাসনালয় ও ব্যক্তিস্বত্বা ক্রমাগতভাবে সহিংসতার মুখে পড়ছে, যা বাংলাদেশের বহুত্ববাদী চেতনা ও সংবিধান পরিপন্থী।
বক্তারা দাবি করেন, গত বছরের ছাত্র ও জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর রাষ্ট্র যে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছিল, তা কার্যত বাস্তবায়িত হয়নি। বরং নারীর নিরাপত্তা, সংখ্যালঘুদের অধিকার ও আইনের শাসন প্রতিনিয়ত প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
তারা বলেন, “এই রাষ্ট্রে একজন নারী এখন ঘরের ভেতরেও নিরাপদ নয়। এটি শুধু আইনশৃঙ্খলার সংকট নয়, এটি নৈতিক ও নীতিগতভাবে রাষ্ট্রের একটি গভীর ব্যর্থতার প্রতিফলন।”
এ সময় মুরাদনগরে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর যেকোনো ধরনের হামলা, হুমকি ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি বাস্তবায়ন, পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কার্যকর ভূমিকা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং সংখ্যালঘু ও নারীর নিরাপত্তায় একটি নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী মনিটরিং সেল গঠন করার দাবী জানান নারী মঞ্চ।
সমাবেশ শেষে জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়, যা পল্টন মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। মিছিল থেকে নারী মঞ্চের নেতারা ঘোষণা দেন, “যদি রাষ্ট্র ন্যায়ের পথে না আসে, তাহলে রাস্তাই হবে আমাদের প্রতিরোধের মঞ্চ।”