মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিমান হামলা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর চালানো হয়েছে। এই হামলা শুধুমাত্র একটি দেশের সামরিক স্থাপনায় আঘাত হানার ঘটনা নয়, বরং তা গোটা মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার ওপর এক গভীর প্রভাব ফেলতে চলেছে। এই প্রেক্ষাপটে রবিবার ২২ জুন বিশ্বের বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছে। তাঁরা স্পষ্ট ভাষায় বলেছে আমরা যুদ্ধ চাই না, চাই শান্তি ও ন্যায়বিচার।
নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কোয়ারে শত শত মানুষ “No War in Iran” লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে জমায়েত হয়। ওয়াশিংটন ডিসিতে হোয়াইট হাউসের সামনে বড় পরিসরে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। লস অ্যাঞ্জেলেস, শিকাগো ও বস্টনের মতো শহরগুলোতেও একযোগে সংগঠিত হয় যুদ্ধবিরোধী সমাবেশ। এসব বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা “Hands off Iran”, “Stop U.S. Imperialism” এবং “Make Peace, Not War” ধ্বনিতে রাজপথ মুখর করে তোলে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাইরেও প্রতিবাদের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে। ইউরোপের বড় বড় শহর যেমন লন্ডন, প্যারিস, আথেন্স ও দ্য হেগে ব্যাপক জনসমাগমে অনুষ্ঠিত হয় যুদ্ধবিরোধী সমাবেশ। লন্ডনের পার্লামেন্ট স্কোয়ারে হাজারো মানুষ ইরান ও ফিলিস্তিনের পতাকা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসী নীতির প্রতিবাদ জানান। দ্য হেগ শহরে ন্যাটো সম্মেলনের প্রাক্কালে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ শান্তির পক্ষে অবস্থান নিয়ে সমবেত হয়। এইসব সমাবেশে দেখা যায় শিক্ষার্থী, শ্রমিক, রাজনৈতিক সংগঠন ও নাগরিক সমাজের মানুষ একক কণ্ঠে যুদ্ধবিরোধী অবস্থান ব্যক্ত করছে।
এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলও ছিল এই প্রতিক্রিয়ার বাইরে নয়। জাপানের টোকিও শহরে মার্কিন দূতাবাসের সামনে শতাধিক মানুষ বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। শান্তিপূর্ণ এই সমাবেশ থেকে আহ্বান জানানো হয়—যুক্তরাষ্ট্র যেন ইরানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করে এবং সমস্যা সমাধানে সংলাপ ও কূটনীতির পথে ফিরে আসে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও এই হামলার বিরুদ্ধে জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ইরাকের রাজধানী বাগদাদের সাদর সিটিতে নামাজ শেষে হাজার হাজার মানুষ “ডেথ টু আমেরিকা” ধ্বনি তোলে এবং আমেরিকান আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানায়। লেবাননের বেইরুট শহরে হিজবুল্লাহ সমর্থকদের মিছিল শহরের কেন্দ্রস্থলে অতিক্রম করে। তারা মনে করে, এই হামলা শুধু ইরানের বিরুদ্ধে নয়, মুসলিম বিশ্বের সার্বভৌমত্বের ওপর একটি আঘাত।
ইরানের ভেতরেও নানা শহরে বিশাল জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। তেহরান, ইসফাহান, মাশহাদ ও তাবরিজে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। তাঁদের হাতে ছিল দেশের জাতীয় পতাকা, শীর্ষ ধর্মীয় নেতাদের ছবি ও প্রতিরোধের প্রতীক। এসব সমাবেশে রাষ্ট্রের পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকরাও অংশ নেন এবং তাঁদের কণ্ঠে ছিল একটাই বার্তা আমরা যুদ্ধ চাই না, আমরা শান্তি চাই।
বাংলাদেশে বাম গণতান্ত্রিক জোট ইরানে মার্কিন বোমা হামলার প্রতিবাদে দেশের রাজধানী ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে।
বিশ্বব্যাপী এই বিক্ষোভ শুধু একটি প্রতিক্রিয়া নয়, বরং একটি বার্তা বহন করে মানবতা যুদ্ধ চায় না। মানুষ সংলাপ চায়, ন্যায়বিচার চায়। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জটিল সংকটসমূহ সমাধানের পথ হিসেবে যুদ্ধকে নয়, বরং আলোচনাকেই বেছে নেওয়া উচিত। এই বিক্ষোভগুলো প্রমাণ করে, আজকের বিশ্বে সচেতন নাগরিকরা যুদ্ধের বিরুদ্ধে এবং শান্তির পক্ষে সোচ্চার। ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য এটি একটি স্পষ্ট বার্তা বিশ্ব আর যুদ্ধ চায় না।
ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়লে তা শুধু এ দুই দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং তার ঢেউ ছড়িয়ে পড়বে গোটা বিশ্বে। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিতিশীলতা, মানবিক বিপর্যয় ও শরণার্থী সংকট আরও তীব্র হবে। তাই এখনই সময়—রাষ্ট্রনেতারা যেন বেসামরিক জনমত ও বিশ্ব বিবেকের আওয়াজ শোনেন এবং যেকোনো সামরিক পথ পরিহার করে কূটনৈতিক সমাধানের পথে অগ্রসর হন।