ঢাকা ০৬:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কেন সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদ মানুষের ভবিষ্যৎ?

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০২:৪৬:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
  • ২২ বার পড়া হয়েছে
প্যারি কমিউন ছিল প্রথম প্রতিষ্ঠিত শ্রমিক শ্রেণির বিপ্লবী সরকার। ১৮৭১ সালের ১৮ই মার্চ থেকে ২৮ই মে পর্যন্ত মাত্র ৭৩ দিন টিকে ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন টিকেছিল ৭০ বছর। সালভাদোর আলেন্দে চিলির প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রপতি ১৯৭০ সালের ৩রা নভেম্বর থেকে ১৯৭৩ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় তিন বছর ক্ষমতায় ছিলেন। সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলেই যে তা টিকে থাকবে এমনটা নয়।
মার্কিন পুঁজিবাদী বুদ্ধিজীবীরা সাম্যবাদ ও সমাজতন্ত্রকে একটি বিপজ্জনক ও অকার্যকর ব্যবস্থা হিসেবে প্রচার করে আসছে, যা দুনিয়ার প্রায় সকল দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়। সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে এদের একগাদা সমালোচনা রয়েছে; ‘ব্যক্তি স্বাধীনতা নেই, গণতন্ত্র নেই, অর্থনৈতিক অদক্ষতা, কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারী শাসন, ঐতিহ্য ও ধর্ম মানেনা ফলে নীতি নৈতিকতাহীন, রাজনৈতিক সহিংসতা করে ও পশ্চিমা মূল্যবোধ যেমন মানবাধিকারের জন্য হুমকি স্বরূপ’।
সাম্যবাদী ও সমাজতান্ত্রিক দলের সীমাহীন অযোগ্যতা ও সীমাবদ্ধতা আছে। দুনিয়ার দেশে দেশে কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা নিজেদের পার্টি ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে, পার্টিকে বিলুপ্ত করে নিজেরা বুর্জোয়া পার্টিতে যোগ দেয়, হঠকারী সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ করে কর্মীদের জীবন বরবাদ করে দেয়, ব্যাক্তি কেন্দ্রিক ব্যাক্তি পূজার সংগঠননীতি, সামাজিক বাস্তবতা না বুঝে রাশিয়া ও চীনের বিপ্লবের কপিপেস্ট করার চেষ্টা – ইত্যাদি ইত্যাদি নানা বিভ্রান্তি, বিশ্বাসঘাতকতা ও অযোগ্যতা নিয়ে অনেক সমালোচনা আছে।
সমাজতান্ত্রিক ও সাম্যবাদী পার্টির প্রচুর ভুল, পরাজয়, অযোগ্যতা ও ব্যর্থতার পরেও, দুনিয়ার প্রভাবশালী সব সংবাদ মাধ্যমের নেতিবাচক প্রচারণার পরেও, প্রায় সকল দেশের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবল সমাজতন্ত্র বিরোধী পাঠ্যক্রম থাকার পরেও – সমাজতন্ত্র কেন এখনো দুনিয়ার সাধারণ মানুষ ও পশ্চিমা বিদ্যায়তনিক পরিসরে জনপ্রিয়?
এর কারণ মানুষের দুই ধরনের উপলব্দি:
এক) পুঁজিবাদের অমানবিক চরিত্র ও সংকট যা নগ্ন ভাবে প্রকাশিত। অসাম্য, শোষণ, বঞ্চনা, অনাহারে মৃত্যু, গৃহহীন মানুষ, যুদ্ধ, নিপীড়ন, পরিবেশ ধ্বংস ও কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড। পুঁজিবাদ প্রতিদিন ২৫০০০ মানুষ না খাইয়ে হত্যা করে। কোন সুস্থ্য ও সচেতন মানুষ এই রকম একটি অমানবিক অসভ্য ব্যবস্থা নৈতিকভাবে সমর্থন করতে পারেনা।
দুই) সমাজতন্ত্র পুঁজিবাদকে বদলাতে চায়। সমাজতন্ত্র বৈষম্য, দারিদ্র্য ও নিপীড়ন থেকে মুক্তির চেষ্টা করে। সমাজতন্ত্র আত্মসমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি ও নিজেদের বদলানোর চেষ্টা করে। সমাজতান্ত্রিক সমাজ জনগণের জীবনমান উন্নয়ন প্রচেষ্টায় নিয়োজিত ও বিশ্বশান্তির পক্ষে কাজ করে। সমাজতন্ত্র কোন পারফেক্ট ব্যাবস্থা নয়, তবে তা নিজেকে বদলাতে চায়, একটি সাম্য ও শান্তির পারফেক্ট ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হতে চায়।
যেহেতু পুঁজিবাদ আছে, এর প্রতিক্রিয়ায় বিকল্প ধারনা হিসেবে সমাজতন্ত্র টিকে আছে। কারণ এটি সমালোচনা ও বিকল্প চিন্তার পদ্ধতি হিসেবে মানুষকে আশা দেয়। পুঁজিবাদী দুনিয়ার অসাম্য, নিপীড়ন, বঞ্চনা যতদিন থাকবে, ততদিন সমাজতন্ত্রের ন্যায্যতা, ভাষা ও আকর্ষণ থাকবে, বিশেষ করে তাদের কাছে যারা কেবল বিশ্বকে ব্যাখ্যা করতে চায় না, বদলাতে চায়।
পশ্চিমা বিদ্যায়তনিক পরিসরে কেন সমাজতন্ত্র বা সাম্যবাদী চিন্তার মানুষ আছে?
কারণ সমাজতন্ত্র ও মার্ক্সবাদ একাডেমিয়ায় শুধু অর্থনৈতিক তত্ত্ব নয়, বরং ক্ষমতা, মতাদর্শ, শ্রেণী, সংস্কৃতি, জাতিসত্তা, বর্ণবাদ, জেন্ডার ইত্যাদি বিশ্লেষণের জন্য একটি শক্তিশালী তাত্ত্বিক কাঠামো। Critical Theory, Postcolonial Studies, Feminism ইত্যাদির ভিত্তিও অনেকাংশে মার্ক্সবাদী বা সাম্যবাদী বিশ্লেষণের ওপর দাঁড়ানো। সাম্রাজ্যবাদ, শোষণ ও আধিপত্য ব্যাখ্যায় সমাজতান্ত্রিক ধারণা এখনো অপরিহার্য। অর্থাৎ পুঁজিবাদী ব্যবস্থা বুঝতে হলে সাম্যবাদী বা মার্ক্সবাদী বিশ্লেষণ পদ্ধতি ‘সত্য’ অনুসন্ধানের হাতিয়ার।
সমাজতন্ত্র বা সাম্যবাদ মানুষের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যাশা পূরণ করে। মানুষ তাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রত্যাশা করে। সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদ মানুষকে সেই সমাজস্বপ্ন সরবরাহ করে। আগামী সমাজের স্বপ্ন দেখায়। সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদ মানুষের ভবিষ্যৎ।

কেন সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদ মানুষের ভবিষ্যৎ?

আপডেট সময় ০২:৪৬:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
প্যারি কমিউন ছিল প্রথম প্রতিষ্ঠিত শ্রমিক শ্রেণির বিপ্লবী সরকার। ১৮৭১ সালের ১৮ই মার্চ থেকে ২৮ই মে পর্যন্ত মাত্র ৭৩ দিন টিকে ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন টিকেছিল ৭০ বছর। সালভাদোর আলেন্দে চিলির প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রপতি ১৯৭০ সালের ৩রা নভেম্বর থেকে ১৯৭৩ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় তিন বছর ক্ষমতায় ছিলেন। সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলেই যে তা টিকে থাকবে এমনটা নয়।
মার্কিন পুঁজিবাদী বুদ্ধিজীবীরা সাম্যবাদ ও সমাজতন্ত্রকে একটি বিপজ্জনক ও অকার্যকর ব্যবস্থা হিসেবে প্রচার করে আসছে, যা দুনিয়ার প্রায় সকল দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়। সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে এদের একগাদা সমালোচনা রয়েছে; ‘ব্যক্তি স্বাধীনতা নেই, গণতন্ত্র নেই, অর্থনৈতিক অদক্ষতা, কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারী শাসন, ঐতিহ্য ও ধর্ম মানেনা ফলে নীতি নৈতিকতাহীন, রাজনৈতিক সহিংসতা করে ও পশ্চিমা মূল্যবোধ যেমন মানবাধিকারের জন্য হুমকি স্বরূপ’।
সাম্যবাদী ও সমাজতান্ত্রিক দলের সীমাহীন অযোগ্যতা ও সীমাবদ্ধতা আছে। দুনিয়ার দেশে দেশে কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা নিজেদের পার্টি ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে, পার্টিকে বিলুপ্ত করে নিজেরা বুর্জোয়া পার্টিতে যোগ দেয়, হঠকারী সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ করে কর্মীদের জীবন বরবাদ করে দেয়, ব্যাক্তি কেন্দ্রিক ব্যাক্তি পূজার সংগঠননীতি, সামাজিক বাস্তবতা না বুঝে রাশিয়া ও চীনের বিপ্লবের কপিপেস্ট করার চেষ্টা – ইত্যাদি ইত্যাদি নানা বিভ্রান্তি, বিশ্বাসঘাতকতা ও অযোগ্যতা নিয়ে অনেক সমালোচনা আছে।
সমাজতান্ত্রিক ও সাম্যবাদী পার্টির প্রচুর ভুল, পরাজয়, অযোগ্যতা ও ব্যর্থতার পরেও, দুনিয়ার প্রভাবশালী সব সংবাদ মাধ্যমের নেতিবাচক প্রচারণার পরেও, প্রায় সকল দেশের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবল সমাজতন্ত্র বিরোধী পাঠ্যক্রম থাকার পরেও – সমাজতন্ত্র কেন এখনো দুনিয়ার সাধারণ মানুষ ও পশ্চিমা বিদ্যায়তনিক পরিসরে জনপ্রিয়?
এর কারণ মানুষের দুই ধরনের উপলব্দি:
এক) পুঁজিবাদের অমানবিক চরিত্র ও সংকট যা নগ্ন ভাবে প্রকাশিত। অসাম্য, শোষণ, বঞ্চনা, অনাহারে মৃত্যু, গৃহহীন মানুষ, যুদ্ধ, নিপীড়ন, পরিবেশ ধ্বংস ও কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড। পুঁজিবাদ প্রতিদিন ২৫০০০ মানুষ না খাইয়ে হত্যা করে। কোন সুস্থ্য ও সচেতন মানুষ এই রকম একটি অমানবিক অসভ্য ব্যবস্থা নৈতিকভাবে সমর্থন করতে পারেনা।
দুই) সমাজতন্ত্র পুঁজিবাদকে বদলাতে চায়। সমাজতন্ত্র বৈষম্য, দারিদ্র্য ও নিপীড়ন থেকে মুক্তির চেষ্টা করে। সমাজতন্ত্র আত্মসমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি ও নিজেদের বদলানোর চেষ্টা করে। সমাজতান্ত্রিক সমাজ জনগণের জীবনমান উন্নয়ন প্রচেষ্টায় নিয়োজিত ও বিশ্বশান্তির পক্ষে কাজ করে। সমাজতন্ত্র কোন পারফেক্ট ব্যাবস্থা নয়, তবে তা নিজেকে বদলাতে চায়, একটি সাম্য ও শান্তির পারফেক্ট ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হতে চায়।
যেহেতু পুঁজিবাদ আছে, এর প্রতিক্রিয়ায় বিকল্প ধারনা হিসেবে সমাজতন্ত্র টিকে আছে। কারণ এটি সমালোচনা ও বিকল্প চিন্তার পদ্ধতি হিসেবে মানুষকে আশা দেয়। পুঁজিবাদী দুনিয়ার অসাম্য, নিপীড়ন, বঞ্চনা যতদিন থাকবে, ততদিন সমাজতন্ত্রের ন্যায্যতা, ভাষা ও আকর্ষণ থাকবে, বিশেষ করে তাদের কাছে যারা কেবল বিশ্বকে ব্যাখ্যা করতে চায় না, বদলাতে চায়।
পশ্চিমা বিদ্যায়তনিক পরিসরে কেন সমাজতন্ত্র বা সাম্যবাদী চিন্তার মানুষ আছে?
কারণ সমাজতন্ত্র ও মার্ক্সবাদ একাডেমিয়ায় শুধু অর্থনৈতিক তত্ত্ব নয়, বরং ক্ষমতা, মতাদর্শ, শ্রেণী, সংস্কৃতি, জাতিসত্তা, বর্ণবাদ, জেন্ডার ইত্যাদি বিশ্লেষণের জন্য একটি শক্তিশালী তাত্ত্বিক কাঠামো। Critical Theory, Postcolonial Studies, Feminism ইত্যাদির ভিত্তিও অনেকাংশে মার্ক্সবাদী বা সাম্যবাদী বিশ্লেষণের ওপর দাঁড়ানো। সাম্রাজ্যবাদ, শোষণ ও আধিপত্য ব্যাখ্যায় সমাজতান্ত্রিক ধারণা এখনো অপরিহার্য। অর্থাৎ পুঁজিবাদী ব্যবস্থা বুঝতে হলে সাম্যবাদী বা মার্ক্সবাদী বিশ্লেষণ পদ্ধতি ‘সত্য’ অনুসন্ধানের হাতিয়ার।
সমাজতন্ত্র বা সাম্যবাদ মানুষের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যাশা পূরণ করে। মানুষ তাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রত্যাশা করে। সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদ মানুষকে সেই সমাজস্বপ্ন সরবরাহ করে। আগামী সমাজের স্বপ্ন দেখায়। সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদ মানুষের ভবিষ্যৎ।