ঢাকা ০৩:২৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত যাওয়ার স্বপ্ন কি প্রায় শেষ?

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৩:৪১:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫
  • ১৬ বার পড়া হয়েছে

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্র, শিল্প, সাইবার নিরাপত্তা, অভিবাসন ও বহুসংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী টনি বার্ক

রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত যাওয়ার স্বপ্ন প্রায় শেষ: আরাকান আর্মি ও রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠী মুখোমুখি: খাদ্য ও করিডোর কূটনীতি সংকটে!

 

বাংলাদেশের রাজনীতি এখন অনেকটা রোহিঙ্গা সমস্যা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে মনে হয়। ইজরায়েল-ইরান আগ্রাসন দেশি বিদেশি সকলের নজর কেড়েছে। কিন্তু তার মধ্যেও বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে সংকট থেমে থাকেনি বরং নতুন মোড় নিয়েছে। কয়েক মাস আগে জাতিসংঘের মহাসচিবের রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভ্রমণে যে আশার বাষ্প তৈরি হয়েছিল, তা আশানুরূপ বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ার আগেই বাতাসে মিলিয়ে যাচ্ছে।

 

সম্প্রতি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জাতিসংঘের এক সভায় বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকট এখন আর শরণার্থী সমস্যায় আবদ্ধ নেই;  এই সংকট এখন মানবিক বিপর্যয়, পরিবেশ এবং ভূ-সামরিক সমস্যায় রুপ নিয়েছে এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ঝুঁকিকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। আর ইতিমধ্যে নিরাপত্তা উপদেষ্টা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে, রোহিঙ্গা সমস্যাকে আলোচনায় এনেছে। রাজনীতিতে কয়েক দিন আগেও আরাকানে করিডোর দেওয়ার বিষয়ে উত্তাপ ছড়িয়েছিল এবং তা থামাতে প্রধান উপদেষ্টাকে বক্তব্য দিতে হয়েছে।

 

করিডোরের পক্ষে বিপক্ষে মতামত এখনও রাজনীতিতে বিরাজমান। কিন্তু সেসব আলোচনাকে অনেকটা অপ্রাসঙ্গিক করছে দুটো গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনে। এক, রোহিঙ্গাদের খাদ্য সাহায্য কমে এসেছে এবং দুই, আরাকান আর্মির আক্রমণে নতুন করে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের সীমান্ত পার হয় চলে আসছে।

 

খবরে প্রকাশ, রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীর সাথে আরাকান আর্মির সংঘাত বেড়েছে এবং রোহিঙ্গাদের মায়ানমার জান্তা সরকার এবং আরাকান আর্মি তাদের পক্ষে যুদ্ধ করতে বাধ্য করছে নতুবা অত্যধিক মুক্তিপণ দিতে হচ্ছে। আগত শরনার্থীরা বলছেন, মগের অত্যাচার বেড়েছে। তাঁরা বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন। সবদিক বিবেচনা করে তাঁরা তাই বাংলাদেশে চলে আসছেন। ইউএসএআইডির ফান্ড কমে গেছে। শুধু চীন ও সুইডেন কিছু টাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বার্ষিক চাহিদার চল্লিশ শতাংশ এখন আছে। সামনের দিনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খাদ্যাভাব আরও বাড়বে। মজার বিষয় হলো, জাতিসংঘ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মানবিক সহায়তা দিতে পারছে না, সেখানে আরাকানে তারা মানবিক সাহায্য নিতে চায়। বিষয়টা বর্তমানে সরকারের হাত থেকে যেমন চলে গেছে তেমনি তা আর জাতিসংঘের হাতেও নেই। খেলা এখন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, মায়ানমার, ভারত ও আরাকান আর্মি ও মায়ানমার সরকারের হাতে।

 

যুক্তরাষ্ট্রের অভিপ্রায় স্পষ্ট অনেকটা, তারা বাংলাদেশকে ব্যবহার করে মিয়ানমার ভাঙবে, চীন ভারতকে চাপে রাখবে। তাই মনে হয় রোহিঙ্গা সংকট অচিরেই একটা মানবিক সংকটের আড়ালে ভূ- সামরিক সংকটে পরিণত হবে।

 

বাংলাদেশের মানুষ এখন বিশ্বে শরণার্থী হিসেবে সংখ্যা বাড়াচ্ছে অথচ নিজ দেশকে রোহিঙ্গা সংকটকে মোকাবিলা করতে গিয়ে নিজেদের অনিরাপদ রাষ্ট্রের ঝুঁকিতে ফেলছে।

 

রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যত আর আরাকানে কতটুকু আর বাংলাদেশে কতটুকু তা ঠান্ডা মাথায় ভাবার সময় এসেছে।

 

শামশের শরিফ
সাবেক পরিচালক
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত যাওয়ার স্বপ্ন কি প্রায় শেষ?

আপডেট সময় ০৩:৪১:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত যাওয়ার স্বপ্ন প্রায় শেষ: আরাকান আর্মি ও রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠী মুখোমুখি: খাদ্য ও করিডোর কূটনীতি সংকটে!

 

বাংলাদেশের রাজনীতি এখন অনেকটা রোহিঙ্গা সমস্যা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে মনে হয়। ইজরায়েল-ইরান আগ্রাসন দেশি বিদেশি সকলের নজর কেড়েছে। কিন্তু তার মধ্যেও বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে সংকট থেমে থাকেনি বরং নতুন মোড় নিয়েছে। কয়েক মাস আগে জাতিসংঘের মহাসচিবের রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভ্রমণে যে আশার বাষ্প তৈরি হয়েছিল, তা আশানুরূপ বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ার আগেই বাতাসে মিলিয়ে যাচ্ছে।

 

সম্প্রতি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জাতিসংঘের এক সভায় বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকট এখন আর শরণার্থী সমস্যায় আবদ্ধ নেই;  এই সংকট এখন মানবিক বিপর্যয়, পরিবেশ এবং ভূ-সামরিক সমস্যায় রুপ নিয়েছে এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ঝুঁকিকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। আর ইতিমধ্যে নিরাপত্তা উপদেষ্টা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে, রোহিঙ্গা সমস্যাকে আলোচনায় এনেছে। রাজনীতিতে কয়েক দিন আগেও আরাকানে করিডোর দেওয়ার বিষয়ে উত্তাপ ছড়িয়েছিল এবং তা থামাতে প্রধান উপদেষ্টাকে বক্তব্য দিতে হয়েছে।

 

করিডোরের পক্ষে বিপক্ষে মতামত এখনও রাজনীতিতে বিরাজমান। কিন্তু সেসব আলোচনাকে অনেকটা অপ্রাসঙ্গিক করছে দুটো গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনে। এক, রোহিঙ্গাদের খাদ্য সাহায্য কমে এসেছে এবং দুই, আরাকান আর্মির আক্রমণে নতুন করে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের সীমান্ত পার হয় চলে আসছে।

 

খবরে প্রকাশ, রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীর সাথে আরাকান আর্মির সংঘাত বেড়েছে এবং রোহিঙ্গাদের মায়ানমার জান্তা সরকার এবং আরাকান আর্মি তাদের পক্ষে যুদ্ধ করতে বাধ্য করছে নতুবা অত্যধিক মুক্তিপণ দিতে হচ্ছে। আগত শরনার্থীরা বলছেন, মগের অত্যাচার বেড়েছে। তাঁরা বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন। সবদিক বিবেচনা করে তাঁরা তাই বাংলাদেশে চলে আসছেন। ইউএসএআইডির ফান্ড কমে গেছে। শুধু চীন ও সুইডেন কিছু টাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বার্ষিক চাহিদার চল্লিশ শতাংশ এখন আছে। সামনের দিনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খাদ্যাভাব আরও বাড়বে। মজার বিষয় হলো, জাতিসংঘ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মানবিক সহায়তা দিতে পারছে না, সেখানে আরাকানে তারা মানবিক সাহায্য নিতে চায়। বিষয়টা বর্তমানে সরকারের হাত থেকে যেমন চলে গেছে তেমনি তা আর জাতিসংঘের হাতেও নেই। খেলা এখন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, মায়ানমার, ভারত ও আরাকান আর্মি ও মায়ানমার সরকারের হাতে।

 

যুক্তরাষ্ট্রের অভিপ্রায় স্পষ্ট অনেকটা, তারা বাংলাদেশকে ব্যবহার করে মিয়ানমার ভাঙবে, চীন ভারতকে চাপে রাখবে। তাই মনে হয় রোহিঙ্গা সংকট অচিরেই একটা মানবিক সংকটের আড়ালে ভূ- সামরিক সংকটে পরিণত হবে।

 

বাংলাদেশের মানুষ এখন বিশ্বে শরণার্থী হিসেবে সংখ্যা বাড়াচ্ছে অথচ নিজ দেশকে রোহিঙ্গা সংকটকে মোকাবিলা করতে গিয়ে নিজেদের অনিরাপদ রাষ্ট্রের ঝুঁকিতে ফেলছে।

 

রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যত আর আরাকানে কতটুকু আর বাংলাদেশে কতটুকু তা ঠান্ডা মাথায় ভাবার সময় এসেছে।

 

শামশের শরিফ
সাবেক পরিচালক
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়