২১ জুন মধ্যরাতে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে আকস্মিক ও বিস্ময়কর হামলা চালায়। লক্ষ্য ছিল ফোরদো, নাতাঞ্জ এবং ইসফাহানের মতো উচ্চ সুরক্ষিত পরমাণু কেন্দ্র। এই হামলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথমবারের মতো সরাসরি ইরানের মাটিতে ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর নামক গভীর বাংকার ধ্বংসকারী বোমা ব্যবহার করে। বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয় এই হামলাকে একতরফা আগ্রাসন এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের সামিল বলে মন্তব্য করে একাধিক দেশ।
চীন এই হামলার তীব্র সমালোচনা করে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা বাড়াবে এবং আঞ্চলিক শান্তি বিঘ্নিত করবে। বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে জাতিসংঘে জরুরি বৈঠকের আহ্বান জানানো হয় এবং ইরানের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় পাশে থাকার ঘোষণা দেওয়া হয়।
রাশিয়াও সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে জানায়, এই ধরনের আগ্রাসন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একে সরাসরি যুদ্ধ উসকে দেওয়ার পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যা দেন এবং রাশিয়া নিজ ঘাঁটিগুলিতে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করে।
উত্তর কোরিয়া এই হামলার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্ব ধ্বংসের প্রধান উৎস বলে ঘোষণা দেয়। রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থার মাধ্যমে কিম জং উনের তরফ থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্তে ক্ষেপণাস্ত্র বাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। পিয়ংইয়ং জানায়, যুক্তরাষ্ট্র আবারও বিশ্বব্যাপী আগ্রাসনের নীতি অনুসরণ করছে এবং এই ধরনের আচরণ বিশ্বের নিরাপত্তা কাঠামো ভেঙে ফেলতে পারে।
অন্যদিকে, ইরান এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় অবিলম্বে অপারেশন শাহাদাত-১ নামক সামরিক প্রতিউত্তর শুরু করে। রেভল্যুশনারি গার্ড বাহিনী (IRGC) তেল আবিব, হাইফা ও অন্যান্য ইসরায়েলি শহরের দিকে একাধিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এই হামলায় অন্তত ১১ জন ইসরায়েলি নাগরিক আহত হন। ইরান হরমুজ প্রণালিতে যুদ্ধজাহাজ ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ইউনিট মোতায়েন করে এবং হিজবুল্লাহসহ অন্যান্য আঞ্চলিক মিত্রদের মাধ্যমে ইসরায়েল সীমান্তে চাপ সৃষ্টি করে। এই প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলও পাল্টা হামলা শুরু করে ইরানের পশ্চিমাঞ্চলের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে বোমাবর্ষণ চালায়।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এই সংঘাত যদি আরও বিস্তৃত হয়, তাহলে তা মানবজাতির জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। তবে ইউরোপীয় দেশগুলো এখনও কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি অবলম্বনের আহ্বান জানালেও দৃঢ় অবস্থানে যেতে পারছে না। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ বিষয়টি নিয়ে দ্বিধায় রয়েছে, কেউ সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থন দিচ্ছে না, আবার কেউ কূটনৈতিকভাবে নীরব।
এই মুহূর্তে পৃথিবী এক সংকটজনক মোড়ে দাঁড়িয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্যকে শুধু উত্তপ্তই করেনি, বরং বৃহত্তর বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি করেছে। চীন-রাশিয়া-উত্তর কোরিয়ার প্রতিক্রিয়া এবং ইরানের যুদ্ধ প্রস্তুতি প্রমাণ করে, একটি ভুল সিদ্ধান্ত গোটা বিশ্বকে যুদ্ধের মুখোমুখি দাঁড় করাতে পারে।
এখনই সময় এক শক্তিশালী, নিরপেক্ষ কূটনৈতিক উদ্যোগ নেওয়ার, যা যুদ্ধ নয়, শান্তির পথ দেখাতে পারে।
আবদুল আহাদ মিনার
সাবেক সাধারণ সম্পাদক
বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী।