ঢাকা ০১:২৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
সংঘাতের আগুনে শান্তির মিথ

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান

ফাইল ফুটেজ

মধ্যপ্রাচ্য আবারো দাঁড়িয়ে আছে যুদ্ধের দোরগোড়ায়। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ইসরায়েল যখন ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে অভূতপূর্ব সামরিক অভিযান চালায়, তখন থেকেই এই অঞ্চলে উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠে। ইরানের পাল্টা প্রতিক্রিয়া, ইসরায়েলের পরপর কয়েকটি জবাবি আক্রমণ এবং আমেরিকার কৌশলগত অবস্থান—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে।

 

দুই দিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমান ইরানের ফোর্ডো ও নাটানজে গভীরভাবে চাপা পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা চালায়। এ হামলায় প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটে এবং বেশ কিছু স্থাপনার বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা কার্যত ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।

 

তবে ইরান দ্রুত পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় যায়। দেশটি ইসরায়েল এবং মধ্যপ্রাচ্যের অন্তত ছয়টি মার্কিন ঘাঁটির দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। ইরানের প্রতিরক্ষা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই হামলা তাদের “জাতীয় আত্মরক্ষার অধিকার”। এর মধ্যেই কাতার, বাহরাইন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিগুলোর আশপাশে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে, যদিও মার্কিন পক্ষ এখনও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি।

 

এ অবস্থায় ট্রাম্প হোয়াইট হাউজ থেকে ঘোষণা দেন এক “সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক যুদ্ধবিরতি”-র। তার ভাষ্য অনুযায়ী, ইরান যদি নিজের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি বন্ধ করে এবং অঞ্চলজুড়ে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলোকে সহায়তা দেওয়া বন্ধ করে, তবে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা কূটনৈতিক আলোচনার পথে এগোতে প্রস্তুত।

 

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে যুক্তরাষ্ট্রের এই ভূমিকা আসলেই কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য? কারণ একদিকে দেশটি যুদ্ধবিরতির কথা বলছে, আর অন্যদিকে তারা নিজেরাই প্রথম পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালিয়ে সংঘাতের সূত্রপাত করেছে। ইরানের দৃষ্টিতে যুক্তরাষ্ট্র এখন আর নিরপেক্ষ কোনো শক্তি নয়, বরং সরাসরি ইসরায়েলের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ পরিচালনাকারী।

 

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই হঠাৎ যুদ্ধবিরতি ঘোষণাকে একধরনের কৌশলগত ‘পজ’ হিসেবেই দেখা হচ্ছে—যেখানে সময় নিয়ে পরবর্তী আঘাতের প্রস্তুতি নেওয়া হতে পারে, অথবা অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপ সামাল দিয়ে আলোচনার টেবিল সাজানো হতে পারে।

 

এদিকে ইসরায়েলও থেমে নেই। তারা পরিষ্কারভাবে জানিয়েছে, যতক্ষণ না ইরানের পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হচ্ছে, ততক্ষণ যুদ্ধ থামবে না। অন্যদিকে, ইরানও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, যদি আবার হামলা হয়, তবে এই সংঘাত কেবল মধ্যপ্রাচ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না এটি ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বের নানা প্রান্তে।

 

বিশ্ববাসী এই মুহূর্তে চোখ রাখছে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে। কিন্তু এই দৃষ্টিপাতের মধ্যে রয়েছে ভীতি, সংশয় এবং হতাশা। কারণ, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন “শান্তি” বলে কূটনৈতিক ভাষা ব্যবহার করে, তখন অনেক সময় সেটি হয় নতুন যুদ্ধের প্রস্তাবনা মাত্র।

 

সুতরাং, ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের এই সর্বশেষ পর্ব শুধু গাজা উপত্যকা বা পারস্য উপসাগর নয় এটি একেবারে ওয়াশিংটন ও তেহরান থেকে শুরু করে মস্কো, বেইজিং এমনকি দিল্লি পর্যন্ত উত্তেজনার ঢেউ তৈরি করছে।

 

এই সংঘাতের শেষ কোথায়, তা এখনও অনিশ্চিত। তবে এটুকু নিশ্চিত যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতা বর্তমানে প্রশ্নের মুখে, আর শান্তি যে কেবল ঘোষণায় আসবে না, সে সত্য বারবার প্রমাণিত হচ্ছে রক্তাক্ত ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে।

আইএমএফের ১৩০ কোটি ডলার ঋণ পেল বাংলাদেশ: রিজার্ভ ফের ২৭ বিলিয়ন ডলারের ঘরে

সংঘাতের আগুনে শান্তির মিথ

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান

আপডেট সময় ০৪:০৮:২৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

মধ্যপ্রাচ্য আবারো দাঁড়িয়ে আছে যুদ্ধের দোরগোড়ায়। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ইসরায়েল যখন ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে অভূতপূর্ব সামরিক অভিযান চালায়, তখন থেকেই এই অঞ্চলে উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠে। ইরানের পাল্টা প্রতিক্রিয়া, ইসরায়েলের পরপর কয়েকটি জবাবি আক্রমণ এবং আমেরিকার কৌশলগত অবস্থান—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে।

 

দুই দিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমান ইরানের ফোর্ডো ও নাটানজে গভীরভাবে চাপা পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা চালায়। এ হামলায় প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটে এবং বেশ কিছু স্থাপনার বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা কার্যত ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।

 

তবে ইরান দ্রুত পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় যায়। দেশটি ইসরায়েল এবং মধ্যপ্রাচ্যের অন্তত ছয়টি মার্কিন ঘাঁটির দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। ইরানের প্রতিরক্ষা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই হামলা তাদের “জাতীয় আত্মরক্ষার অধিকার”। এর মধ্যেই কাতার, বাহরাইন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিগুলোর আশপাশে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে, যদিও মার্কিন পক্ষ এখনও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি।

 

এ অবস্থায় ট্রাম্প হোয়াইট হাউজ থেকে ঘোষণা দেন এক “সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক যুদ্ধবিরতি”-র। তার ভাষ্য অনুযায়ী, ইরান যদি নিজের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি বন্ধ করে এবং অঞ্চলজুড়ে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলোকে সহায়তা দেওয়া বন্ধ করে, তবে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা কূটনৈতিক আলোচনার পথে এগোতে প্রস্তুত।

 

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে যুক্তরাষ্ট্রের এই ভূমিকা আসলেই কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য? কারণ একদিকে দেশটি যুদ্ধবিরতির কথা বলছে, আর অন্যদিকে তারা নিজেরাই প্রথম পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালিয়ে সংঘাতের সূত্রপাত করেছে। ইরানের দৃষ্টিতে যুক্তরাষ্ট্র এখন আর নিরপেক্ষ কোনো শক্তি নয়, বরং সরাসরি ইসরায়েলের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ পরিচালনাকারী।

 

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই হঠাৎ যুদ্ধবিরতি ঘোষণাকে একধরনের কৌশলগত ‘পজ’ হিসেবেই দেখা হচ্ছে—যেখানে সময় নিয়ে পরবর্তী আঘাতের প্রস্তুতি নেওয়া হতে পারে, অথবা অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপ সামাল দিয়ে আলোচনার টেবিল সাজানো হতে পারে।

 

এদিকে ইসরায়েলও থেমে নেই। তারা পরিষ্কারভাবে জানিয়েছে, যতক্ষণ না ইরানের পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হচ্ছে, ততক্ষণ যুদ্ধ থামবে না। অন্যদিকে, ইরানও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, যদি আবার হামলা হয়, তবে এই সংঘাত কেবল মধ্যপ্রাচ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না এটি ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বের নানা প্রান্তে।

 

বিশ্ববাসী এই মুহূর্তে চোখ রাখছে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে। কিন্তু এই দৃষ্টিপাতের মধ্যে রয়েছে ভীতি, সংশয় এবং হতাশা। কারণ, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন “শান্তি” বলে কূটনৈতিক ভাষা ব্যবহার করে, তখন অনেক সময় সেটি হয় নতুন যুদ্ধের প্রস্তাবনা মাত্র।

 

সুতরাং, ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের এই সর্বশেষ পর্ব শুধু গাজা উপত্যকা বা পারস্য উপসাগর নয় এটি একেবারে ওয়াশিংটন ও তেহরান থেকে শুরু করে মস্কো, বেইজিং এমনকি দিল্লি পর্যন্ত উত্তেজনার ঢেউ তৈরি করছে।

 

এই সংঘাতের শেষ কোথায়, তা এখনও অনিশ্চিত। তবে এটুকু নিশ্চিত যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতা বর্তমানে প্রশ্নের মুখে, আর শান্তি যে কেবল ঘোষণায় আসবে না, সে সত্য বারবার প্রমাণিত হচ্ছে রক্তাক্ত ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে।