ঢাকা ১০:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কল্পনা দত্তকে ক’জন চিনি?

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৮:০৪:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫
  • ৬ বার পড়া হয়েছে

বিপ্লবী প্রীতিলতার নাম আমরা প্রায় সবাই জানি, কিন্তু কল্পনা দত্তকে ক’জন চিনি? অথচ এঁরা দুজনই কিন্তু মাস্টারদা সূর্য সেনের সঙ্গে এক সারিতে দাঁড়িয়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন।

 

১৯৩২ সালে বীরোচিতভাবে আত্মাহুতি দিয়ে তাঁর সংগ্রামী জীবনের ইতি টেনেছিলেন মাত্র একুশ বছর বয়সে; কল্পনা দত্ত কিন্তু বেঁচেছিলেন আরও অনেক বছর, ১৯৯৫ অব্দি, এবং তাঁর এই সুদীর্ঘ বিরাশি বছরের ঘটনাবহুল জীবনটা ছিল নানাদিক থেকেই উল্লেখযোগ্য, আকর্ষণীয়, ব্যতিক্রমী এবং দৃষ্টান্তস্বরূপ। কিন্তু এতকাল তাঁর সম্পর্কে বিশদে জানার কোনও উপায় ছিল না আমাদের।

 

সম্প্রতি সেই অভাবটুকু মোচনে এগিয়ে এসেছেন চট্টগ্রামের তন্নিষ্ঠ লেখক ও গবেষক, শমশির শরীফ, যিনি ইতো:পূর্বে ‘চট্টগ্রামের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস’ বইটি রচনা এবং ‘ভারতের স্বধীনতা সংগ্রাম, চট্টগ্রাম বিদ্রোহ ও বিপ্লবী মহানায়ক সূর্য সেন’ নামক একটি বিশালাকার সংকলনগ্রন্থ সম্পাদনা করে সুধীজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। এবার তিনি রচনা করেছেন ‘কল্পনা দত্ত: এক অগ্নিকন্যার বিপ্লবী জীবন ও সময়’ শিরোনামে বিপ্লবী কল্পনা দত্তর বিশদ ও পূর্বাপর জীবনী।

 

রয়েল সাইজের ৩১০ পৃষ্ঠার এই বিপুলায়তন গ্রন্থে কল্পনা দত্তর শৈশব, কৈশোর, যৌবনের হয়ে-ওঠা দিনগুলোর কথা তো রয়েছেই, সেইসঙ্গে রয়েছে তাঁর বিপ্লবী জীবনের গল্প, ১৯৩৩ সালে ব্রিটিশদের হাতে ধরা পড়া, অস্ত্রাগার লুণ্ঠন মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হওয়া, খোদ রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্যদের হস্তক্ষেপে ১৯৩৯ সালে জেল থেকে মুক্তি পাওয়া, কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ডিগ্রি অর্জন, ভারতের কম্যুনিস্ট পার্টিতে যোগ দেওয়া, এমনকি খোদ এর সাধারণ সম্পাদক পি. সি. যোশীর সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হওয়া, বিয়ের পর চট্টগ্রামে ফিরে গিয়ে দলের মহিলা ও কৃষক সংগঠনকে উজ্জীবিত করা, ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে কম্যুনিস্ট পার্টির হয়ে চট্টগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা, রুশ ভাষা শেখা এবং দিল্লির রুশ দূতাবাসে ভাষাশিক্ষক হিসাবে কাজ করা, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় সহযোগিতার উদার হস্ত বাড়িয়ে দেওয়া, স্বাধীনতা পরবর্তীকালে বাংলাদেশ ভ্রমণ ও বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ ইত্যাদি হাজারো বিষয়ের ওপর বিস্তৃত এবং প্রায়শই সচিত্র, প্রামাণিক আলোকপাত।

 

এটিকে তাই শুধু জীবনী বললে কম বলা হবে; বস্তুত এর মধ্য দিয়ে তিনি আমাদের জাতীয় ইতিহাসের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পর্বের সানুপুঙ্খ, সুখপাঠ্য ইতিহাস নির্মাণ করেন। এই মহাগ্রন্থটি ইতিহাস সচেতন প্রত্যেক বাঙালির অবশ্যপাঠ্য হওয়া উচিত। লেখক, গবেষক শরীফ শমশিরকে সশ্রদ্ধ অভিনন্দন ও অশেষ কৃতজ্ঞতা।

 

আলম খোরশেদ।

জনপ্রিয় সংবাদ

বিএনপি সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রিত্বের পক্ষে

কল্পনা দত্তকে ক’জন চিনি?

আপডেট সময় ০৮:০৪:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

বিপ্লবী প্রীতিলতার নাম আমরা প্রায় সবাই জানি, কিন্তু কল্পনা দত্তকে ক’জন চিনি? অথচ এঁরা দুজনই কিন্তু মাস্টারদা সূর্য সেনের সঙ্গে এক সারিতে দাঁড়িয়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন।

 

১৯৩২ সালে বীরোচিতভাবে আত্মাহুতি দিয়ে তাঁর সংগ্রামী জীবনের ইতি টেনেছিলেন মাত্র একুশ বছর বয়সে; কল্পনা দত্ত কিন্তু বেঁচেছিলেন আরও অনেক বছর, ১৯৯৫ অব্দি, এবং তাঁর এই সুদীর্ঘ বিরাশি বছরের ঘটনাবহুল জীবনটা ছিল নানাদিক থেকেই উল্লেখযোগ্য, আকর্ষণীয়, ব্যতিক্রমী এবং দৃষ্টান্তস্বরূপ। কিন্তু এতকাল তাঁর সম্পর্কে বিশদে জানার কোনও উপায় ছিল না আমাদের।

 

সম্প্রতি সেই অভাবটুকু মোচনে এগিয়ে এসেছেন চট্টগ্রামের তন্নিষ্ঠ লেখক ও গবেষক, শমশির শরীফ, যিনি ইতো:পূর্বে ‘চট্টগ্রামের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস’ বইটি রচনা এবং ‘ভারতের স্বধীনতা সংগ্রাম, চট্টগ্রাম বিদ্রোহ ও বিপ্লবী মহানায়ক সূর্য সেন’ নামক একটি বিশালাকার সংকলনগ্রন্থ সম্পাদনা করে সুধীজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। এবার তিনি রচনা করেছেন ‘কল্পনা দত্ত: এক অগ্নিকন্যার বিপ্লবী জীবন ও সময়’ শিরোনামে বিপ্লবী কল্পনা দত্তর বিশদ ও পূর্বাপর জীবনী।

 

রয়েল সাইজের ৩১০ পৃষ্ঠার এই বিপুলায়তন গ্রন্থে কল্পনা দত্তর শৈশব, কৈশোর, যৌবনের হয়ে-ওঠা দিনগুলোর কথা তো রয়েছেই, সেইসঙ্গে রয়েছে তাঁর বিপ্লবী জীবনের গল্প, ১৯৩৩ সালে ব্রিটিশদের হাতে ধরা পড়া, অস্ত্রাগার লুণ্ঠন মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হওয়া, খোদ রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্যদের হস্তক্ষেপে ১৯৩৯ সালে জেল থেকে মুক্তি পাওয়া, কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ডিগ্রি অর্জন, ভারতের কম্যুনিস্ট পার্টিতে যোগ দেওয়া, এমনকি খোদ এর সাধারণ সম্পাদক পি. সি. যোশীর সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হওয়া, বিয়ের পর চট্টগ্রামে ফিরে গিয়ে দলের মহিলা ও কৃষক সংগঠনকে উজ্জীবিত করা, ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে কম্যুনিস্ট পার্টির হয়ে চট্টগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা, রুশ ভাষা শেখা এবং দিল্লির রুশ দূতাবাসে ভাষাশিক্ষক হিসাবে কাজ করা, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় সহযোগিতার উদার হস্ত বাড়িয়ে দেওয়া, স্বাধীনতা পরবর্তীকালে বাংলাদেশ ভ্রমণ ও বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ ইত্যাদি হাজারো বিষয়ের ওপর বিস্তৃত এবং প্রায়শই সচিত্র, প্রামাণিক আলোকপাত।

 

এটিকে তাই শুধু জীবনী বললে কম বলা হবে; বস্তুত এর মধ্য দিয়ে তিনি আমাদের জাতীয় ইতিহাসের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পর্বের সানুপুঙ্খ, সুখপাঠ্য ইতিহাস নির্মাণ করেন। এই মহাগ্রন্থটি ইতিহাস সচেতন প্রত্যেক বাঙালির অবশ্যপাঠ্য হওয়া উচিত। লেখক, গবেষক শরীফ শমশিরকে সশ্রদ্ধ অভিনন্দন ও অশেষ কৃতজ্ঞতা।

 

আলম খোরশেদ।