ভাষা আন্দোলনের প্রাবন্ধিক ইতিহাসবিদ, গবেষক ও রবীন্দ্রচর্চার অনন্য সাধক আহমদ রফিক আর নেই। বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) রাত ১০টা ১২ মিনিটে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর।
আহমদ রফিক ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ও ট্রাস্টি ইসমাইল সাদী শুক্রবার এক বার্তায় জানান, সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আগামীকাল শনিবার (৪ অক্টোবর) সকাল ১১টায় তাঁর মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হবে। পরে শোকর্যালির মাধ্যমে মরদেহ ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হস্তান্তর করা হবে। মৃত্যুর আগে আহমদ রফিক নিজেই তাঁর দেহ চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য দান করেছিলেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, কিডনি জটিলতা ও একাধিক মাইল্ড স্ট্রোকে ভুগছিলেন আহমদ রফিক। সেপ্টেম্বরে ল্যাবএইড হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পর তাঁকে হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত রবিবার তাঁকে স্থানান্তর করা হয় বারডেম হাসপাতালে। বুধবার বিকেলে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার রাতে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান।
১৯২৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্ম নেওয়া আহমদ রফিক দীর্ঘদিন রাজধানীর নিউ ইস্কাটনের গাউসনগরে একা বসবাস করতেন। ২০০৬ সালে স্ত্রীকে হারানোর পর তিনি নিঃসন্তান জীবনে নিভৃত ছিলেন। বিপুলসংখ্যক বইয়ের সংগ্রহই ছিল তাঁর মূল সম্পদ।
ভাষা আন্দোলনের অন্যতম দলিলপ্রণেতা এই লেখক শতাধিক গ্রন্থ রচনা ও সম্পাদনা করেছেন। পেয়েছেন একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা। রবীন্দ্রচর্চায় দুই বাংলায় সমানভাবে স্বীকৃত তিনি। কলকাতার টেগর রিসার্চ ইনস্টিটিউট তাঁকে প্রদান করেছিল ‘রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য’ উপাধি।
২০১৯ সালে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হতে শুরু করলে অস্ত্রোপচার করেও আর সুস্থতা ফেরেনি। ২০২১ সালে পড়ে গিয়ে পা ভাঙার পর থেকেই তাঁর শারীরিক অবস্থা আরও অবনতি ঘটে। ২০২৩ সাল থেকে প্রায় সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন হয়ে যান তিনি। বুদ্ধিজীবী মহল থেকে তাঁর চিকিৎসার উন্নত ব্যবস্থার দাবি তুললেও কাঙ্ক্ষিত সহায়তা মেলেনি।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জন্য আজীবন শ্রম দেয়া এই সংগ্রামীকে রাজধানীর শহীদ মিনারে দেশের মানুষ শেষ শ্রদ্ধা জানাবে। এরপর তিনি চিরবিদায় নেবেন, রেখে যাবেন ভাষা, সাহিত্য ও রবীন্দ্রচর্চার এক অমূল্য ঐতিহ্য।
নিজস্ব প্রতিবেদক: 







