চট্টগ্রাম বন্দর শুধু একটি অর্থনৈতিক কেন্দ্র নয়, বরং এটি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও কৌশলগত নিরাপত্তার সরাসরি প্রতিচ্ছবি—এমন মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেছেন, দেশের এই গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে অবশ্যই অংশীজনদের (স্টেকহোল্ডার) মতামত নেওয়া উচিত। জনগণকে না জানিয়ে বা মতামত উপেক্ষা করে নেওয়া সিদ্ধান্ত জাতীয় ঐক্যে ভাঙন ধরাতে পারে।
শুক্রবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে ‘নতুন বাংলাদেশে মিডিয়ার ভূমিকা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভার সভাপতিত্ব করেন প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সাংবাদিক নেতা সালেহ নোমান।
জোনায়েদ সাকি বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দরের আধুনিকায়ন প্রয়োজন—তা আমরা মানি। কিন্তু সেই আধুনিকায়ন যেন হয় স্বচ্ছতা ও জনগণের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে। শ্রমিক, ব্যবসায়ী, বন্দর কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় মানুষ এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলোর মতামত না নিয়ে যদি বিদেশি অপারেটরের হাতে বন্দরের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়, তাহলে সেটা এক ধরনের কর্তৃত্ববাদ প্রতিষ্ঠার শামিল হবে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “বন্দর তো জনগণের অর্থেই গড়ে উঠেছে। তাহলে জনগণেরই অধিকার জানার—কেন, কীভাবে, কার স্বার্থে এর ব্যবস্থাপনা বিদেশিদের হাতে দেওয়া হচ্ছে।”
সাংবাদিকতার গুরুত্ব তুলে ধরে সাকি বলেন, “সাংবাদিকতা এখন আর কেবল খবর সংগ্রহের কাজ নয়, বরং তা হয়ে উঠেছে একটি জাতির বিবেক। কিন্তু ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর একচেটিয়া প্রভাব ও মালিকানার জেরে মিডিয়ার স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।”
তিনি জানান, ৫ আগস্টের পরবর্তী রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রস্তাব করা হয়েছে মিডিয়া মালিকানার বহুমাত্রিকতা আনার, যেন একক গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে এসে সংবাদমাধ্যম জনগণের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠতে পারে। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের ন্যায্য বেতন, প্রশিক্ষণ ও পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে গণমাধ্যম কেবল ব্যবস্থার অংশ হয়ে থাকবে, প্রতিবাদের নয়।
সংবিধান এবং বিচার বিভাগ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সাকি মন্তব্য করেন, “বর্তমান সংবিধানে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা একনায়কতন্ত্র বা ফ্যাসিবাদের বীজ বপন করে রেখেছে। গণতন্ত্রের মোড়কে একরকম শাসককেন্দ্রিক রাষ্ট্র কাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। এটি সংস্কার ছাড়া শুধু নির্বাচন দিয়ে কাঠামোগত পরিবর্তন সম্ভব নয়।”
তিনি উল্লেখ করেন, প্রধানমন্ত্রী পদের মেয়াদ নির্ধারণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, নির্বাচনী পদ্ধতির স্বচ্ছতা ইত্যাদি নিয়ে বর্তমানে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলই ঐক্যমত পোষণ করছে। এসব বিষয়ে সমন্বিত সংস্কারই হতে পারে নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি।