চলমান আন্দোলনে কার্যত অচল হয়ে পড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সচল করতে অবশেষে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে এনবিআর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক, এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান ও এনবিআরের ১৬ জন সদস্য।
বৈঠকে গৃহিত সিদ্ধান্ত তিনটি হলো:
১. এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ এবং ‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচি আপাতত স্থগিত রাখা।
২. সদ্য বদলি হওয়া দুই কর্মকর্তার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হবে।
৩. আগামী ১ জুলাই বিকেল ৪টায় ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের আয়োজন করা হবে, যেখানে এনবিআর কর্মকর্তা, সংস্কার পরিষদের নেতারা এবং রাজস্ব বিষয়ক পরামর্শক কমিটি অংশ নেবেন।
বৈঠক শেষে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, “দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সকল কর্মকর্তাকে নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরে গিয়ে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে।”
আসন্ন ত্রিপক্ষীয় আলোচনায় মূলত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে—‘রাজস্বনীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এ সম্ভাব্য সংশোধন। সরকারের লক্ষ্য, আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে সংশোধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে একটি টেকসই কাঠামো গড়ে তোলা।
এর আগে গত ১২ মে, আইএমএফের শর্তের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এনবিআর বিলুপ্ত করে দুটি নতুন বিভাগ—রাজস্বনীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা—গঠনের ঘোষণা দেয়। লক্ষ্য ছিল কর নীতি ও বাস্তবায়নকে পৃথক করা। যদিও এই কাঠামো নিয়ে এনবিআরের কর্মকর্তাদের আপত্তি নেই, তবে তাদের প্রধান দাবি—নিয়োগে রাজস্ব ক্যাডারের অগ্রাধিকার নিশ্চিত করা।
সরকার জানায়, নিয়োগে মেধা ও যোগ্যতাই হবে মুখ্য বিবেচ্য, ফলে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারাও বিবেচনায় আসতে পারেন। তবে এই অবস্থানেই ক্ষুব্ধ এনবিআরের বড় একটি অংশ।
এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের নেতারা সরাসরি এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানের অপসারণ দাবি করেছেন। তাদের অভিযোগ—তিনি সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে পরিস্থিতির যথাযথ চিত্র তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন, ফলে ভুল সিদ্ধান্তে সৃষ্টি হয়েছে অনাকাঙ্ক্ষিত অচলাবস্থা।
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, চেয়ারম্যান ইস্যুতে সমাধান না হলে আন্দোলন থামবে না। বিকেলে এক বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার বলেন, “চেয়ারম্যানকে পদত্যাগ করতে হবে—এটাই আমাদের আন্দোলনের অন্যতম শর্ত। সবার মতামতের ভিত্তিতেই এনবিআর সংস্কার সম্ভব।”
বর্তমান পরিস্থিতি শুধু এনবিআরের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়, বরং জাতীয় অর্থনীতির জন্যও তা গভীর উদ্বেগের। কারণ, এনবিআরের অচলাবস্থায় দেশের রাজস্ব প্রবাহে মারাত্মক ধস নামতে পারে, যার প্রভাব পড়বে সামষ্টিক অর্থনীতিতে। ফলে আলোচনার মাধ্যমে চলমান সংকটের দ্রুত সমাধানই এখন সবচেয়ে জরুরি।