১৯৯০-এর দশক থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক দশক পর্যন্ত প্রায় ২৪টি দেশে যে রেজিমচেঞ্জ হয়েছে, সেগুলোর পিছনে একটি কমন কাঠামোগত কারণ দেখা যায়: পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সংকট এবং সেই সংকট মোকাবেলায় বিশ্বজুড়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কৌশলগত প্রতিক্রিয়া।
১৯৭০-এর দশকের পর থেকে পুঁজিবাদে লাভের হার কমতে থাকে (মার্ক্সবাদী পর্যবেক্ষণ)। ১৯৮০-৯০ দশকে নিও-লিবারেল রিফর্ম চাপিয়ে দেওয়া হয়, যেমন বেসরকারিকরণ, শ্রমের অবমূল্যায়ন, কল্যাণ রাষ্ট্রের ছাঁটাই ইত্যাদি। এর ফলে ক্রোনি পুঁজিবাদের উদ্ভব, সরকারের নয়া-উদারবাদি উন্নয়ননীতি, দুর্নীতি, বেকারত্ব, মানবাধিকার হরণ, যার বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ বাড়ে।
বিশ্বপুঁজিবাদ তথা সাম্রাজ্যবাদ তখন বিকল্প শক্তির উত্থান, যেমন সমাজতন্ত্রী বা প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী সরকার এর সম্ভাবনা অঙ্কুরেই বিনাশ করতে চায়। সেজন্য গণঅসন্তোষকে কাজে লাজিয়ে ‘রেজিমচেঞ্জ’ ঘটায়।
রেজিমচেঞ্জের দ্বিতীয় কারণ, স্নায়ু যুদ্ধের পরে ভূ-রাজনৈতিক পুনর্বিন্যাস ও মার্কিন আধিপত্য রক্ষা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র “Unipolar World Order” রক্ষা করতে চায়, ‘গ্লোবাল সাউথ’ এর কারণে যা হুমকির মুখে। কোনো দেশ যদি চীন, রাশিয়া, বা ভারতের সাথে আঞ্চলিক জোটে যোগ দেয় তা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে। সেই দেশ রেজিমচেঞ্জের টার্গেটে পরিণত হয়।
তৃতীয় কারণ হচ্ছে প্রাকৃতিক সম্পদ ও বাজার নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য। তেল, গ্যাস, লিথিয়াম, জলাধার, বিরল খনিজ ইত্যাদির উপর নিয়ন্ত্রণ পুঁজিবাদের টিকে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যেমন: ইরাক, লিবিয়া, ভেনিজুয়েলা, সিরিয়া, উক্রাইন – এদের রেজিমচেঞ্জ প্রকল্পের পেছনে এই অর্থনৈতিক লালসা স্পষ্ট।
চতুর্থ কারণ হচ্ছে, মতাদর্শগত আধিপত্য যা ‘ডেমোক্রেসি’ শিক্ষার ছদ্মবেশ ধারণ করে পরিচালিত হয় (NED)। ‘ফ্রি মার্কেট’, ‘হিউম্যান রাইটস’, ‘ডেমোক্রেসি’ ইত্যাদি ধারণার মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করে রেজিমচেঞ্জকে বৈধতা দেওয়া হয়। কালার রেভলিউশন এবং আরব বসন্ত ধরনের রেজিমচেঞ্জে লিবারেল এনজিও ও মিডিয়া ব্যবহার করা হয়।
আজিজুর রহমান আসাদ।