ঢাকা ০৩:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিপ্লব ঠেকাতে, পুঁজিবাদ রক্ষায় ও দালাল তৈরির জন্য সিআইএ কি কৌশল নেয়?

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০১:৫৪:৫৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫
  • ৪১ বার পড়া হয়েছে

notun kotha logo.png

সিআইএ সংগঠনটি দুনিয়াব্যাপি সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদী পার্টি সহ দেশপ্রেমিক সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী পার্টিকে দুর্বল, বিভক্ত, বিভ্রান্ত ও প্রয়োজনে ধ্বংস করে দেয়। বিপরীতে ঐ দেশের রক্ষণশীল ও ফ্যাসিবাদী পার্টিকে শক্তিশালী করে, যাতে স্থানীয়ভাবে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিপক্ষে এরা ভূমিকা রাখে।

 

সিআইএ একটি দেশে কি কি করে?

১. রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার ও “প্রক্সি” সৃষ্টির কৌশলসমূহ

একটি সহযোগী রাজনৈতিক শক্তি (দল) গড়ে তোলার জন্য অর্থ ও লজিস্টিক সহায়তা দেয়। বামপন্থী প্রগতিশীল দলের বিপক্ষে দক্ষিণপন্থী দলগুলোকে গোপনে অর্থায়ন করে। ইতিহাসে এমন ঘটনা আছে যে নির্বাচনে বামপন্থীদের পরাজিত করার জন্য ১৯৪৮ সালের ইতালির নির্বাচনে বিশাল অর্থায়ন করে।

পার্টির বাইরেও একটি সহযোগী শক্তি গড়ে তোলে যারা মিডিয়া ও সাংস্কৃতিক ফ্রন্টে কাজ করবে। সিআইএ Congress for Cultural Freedom (CCF) প্রতিষ্ঠা করে, যার মাধ্যমে “অ্যান্টি-কমিউনিস্ট” সাংস্কৃতিক প্রচারণা চালানো হয়। সাহিত্য, থিয়েটার, শিল্প, সিনেমা—সব জায়গায় এই প্রভাব বিস্তার করা হয়। গোপনে বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, প্রগতিশীল নামধারী লেখকদের মধ্যে অনুদান দিয়ে পশ্চিমপন্থী মতাদর্শ ছড়িয়ে দেওয়া।

২. সামরিক বাহিনীর ভিতরে অনুপ্রবেশ ও কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ

যুক্তরাষ্ট্রের “Military সমাজতন্ত্রAssistance Program (MAP)” এর মাধ্যমে বহু উন্নয়নশীল দেশের সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দেওয়া হয়। সেনাবাহিনীতে মার্কিনপন্থী অফিসারদের প্রভাব বাড়ানো হয়। “সিআইএ-অনুমোদিত” সেনা অভ্যুত্থান ঘটানো হয়। যেসব দেশে মার্কিন স্বার্থের পরিপন্থী সরকার ক্ষমতায় আসে, সেখানে সিআইএ রেজিমচেঞ্জের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। যেমন ইরান (১৯৫৩), গুয়াতেমালা (১৯৫৪), চিলি (১৯৭৩), বিশ্বজুড়ে বহু উদাহরণ আছে।

৩. গোপন অভিযান সমাজতন্ত্রসা প্রপাগান্ডা কৌশল

False Flag Operations হচ্ছে নিজেরাই হামলা বা বিশৃঙ্খলা ঘটিয়ে কমিউনিস্ট বা শত্রু পক্ষকে দায়ী করা (ব্লেইম শিফটিং)। মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ (Psychological Operations) যা ‘সাই অপস’ কৌশল বিশেষ করে প্রোপাগান্ডা, গুজব ছড়ানো, নেতাদের চরিত্রহনন, ভয়ের পরিবেশ তৈরি ইত্যাদি।

একটি প্রধান কৌশল গুপ্তচর নিয়োগ ও ইনফিলট্রেশন করা। কমিউনিস্ট পার্টি, সমাজতান্ত্রিক দল, ট্রেড ইউনিয়ন, ছাত্রসংগঠন, এমনকি সরকারী দপ্তরেও নিজেদের চর ঢুকিয়ে তথ্য সংগ্রহ ও সংগঠন ভাঙ্গার কাজ হয়।

৪. অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ও সহায়তার মাধ্যমে প্রভাব সৃষ্টি করা। মার্কিন অর্থনৈতিক সাহায্য দিয়ে বন্ধু রাষ্ট্রে ‘উন্নয়ন প্রকল্প’ করানো, এর বিপরীতে রাজনৈতিক আনুগত্য দাবি। (কাপ্তাই বাঁধ)

আফ্রিকা ও এশিয়ায় অনেক দেশে শ্রমিক আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ করতে সিআইএ গোপনে “anti-communist unions” গড়ে তুলেছে।

৫. বিশেষ প্রয়োজনে মিথ্যা তথ্য ও সংবাদ নিয়ন্ত্রণ (Disinformation) করে বিপ্লবীদের প্রতি নেতিবাচক প্রচারণা চালায়। সাধারণভাবে সংবাদমাধ্যম, সামাজিক বক্তৃতা ও শিক্ষাব্যবস্থার মধ্য দিয়ে “কমিউনিজম মানেই সন্ত্রাস, নির্যাতন, ধর্মহীনতা” এই ধরনের ধারণা ছড়িয়ে দেওয়া হয়ে থাকে।

 

বাংলাদেশে যা হচ্ছে, যেমন সাম্যবাদী দলের বিভক্তি, মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘দুই কুকুরের কামড়া কামড়ি’ তত্ত্ব, ১৯৭১ সালে বুদ্ধিজীবী হত্যা, আওয়ামীলীগের সৌদিমুখী হওয়া ও আভ্যন্তরীণ কোন্দল, জামাত শিবির ও জঙ্গিবাদের উথান, এবং পরিশেষে ২০২৪ এর রেজিমচেঞ্জ – অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের পরে বাংলাদেশের বিভিন্ন সময়ের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে সিআইএর ভূমিকা ছিল ও আছে।

বাংলাদেশে যে তরুণরা বিপ্লব করতে চান, আপনাদের মনে রাখতে হবে, বিপ্লবী আন্দোলন ও পার্টির আজকের দুর্দশার জন্য সিআইএর ভূমিকা আছে। পার্টির ভেতরে যে চর ঢুকানো হয় ও ইনফিলট্রেশন ঘটে, তা অনুসন্ধান ও এই ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাল্টা কৌশল প্রয়োজন।

 

আজিজুর রহমান আসাদ।

বিপ্লব ঠেকাতে, পুঁজিবাদ রক্ষায় ও দালাল তৈরির জন্য সিআইএ কি কৌশল নেয়?

আপডেট সময় ০১:৫৪:৫৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫

সিআইএ সংগঠনটি দুনিয়াব্যাপি সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদী পার্টি সহ দেশপ্রেমিক সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী পার্টিকে দুর্বল, বিভক্ত, বিভ্রান্ত ও প্রয়োজনে ধ্বংস করে দেয়। বিপরীতে ঐ দেশের রক্ষণশীল ও ফ্যাসিবাদী পার্টিকে শক্তিশালী করে, যাতে স্থানীয়ভাবে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিপক্ষে এরা ভূমিকা রাখে।

 

সিআইএ একটি দেশে কি কি করে?

১. রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার ও “প্রক্সি” সৃষ্টির কৌশলসমূহ

একটি সহযোগী রাজনৈতিক শক্তি (দল) গড়ে তোলার জন্য অর্থ ও লজিস্টিক সহায়তা দেয়। বামপন্থী প্রগতিশীল দলের বিপক্ষে দক্ষিণপন্থী দলগুলোকে গোপনে অর্থায়ন করে। ইতিহাসে এমন ঘটনা আছে যে নির্বাচনে বামপন্থীদের পরাজিত করার জন্য ১৯৪৮ সালের ইতালির নির্বাচনে বিশাল অর্থায়ন করে।

পার্টির বাইরেও একটি সহযোগী শক্তি গড়ে তোলে যারা মিডিয়া ও সাংস্কৃতিক ফ্রন্টে কাজ করবে। সিআইএ Congress for Cultural Freedom (CCF) প্রতিষ্ঠা করে, যার মাধ্যমে “অ্যান্টি-কমিউনিস্ট” সাংস্কৃতিক প্রচারণা চালানো হয়। সাহিত্য, থিয়েটার, শিল্প, সিনেমা—সব জায়গায় এই প্রভাব বিস্তার করা হয়। গোপনে বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, প্রগতিশীল নামধারী লেখকদের মধ্যে অনুদান দিয়ে পশ্চিমপন্থী মতাদর্শ ছড়িয়ে দেওয়া।

২. সামরিক বাহিনীর ভিতরে অনুপ্রবেশ ও কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ

যুক্তরাষ্ট্রের “Military সমাজতন্ত্রAssistance Program (MAP)” এর মাধ্যমে বহু উন্নয়নশীল দেশের সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দেওয়া হয়। সেনাবাহিনীতে মার্কিনপন্থী অফিসারদের প্রভাব বাড়ানো হয়। “সিআইএ-অনুমোদিত” সেনা অভ্যুত্থান ঘটানো হয়। যেসব দেশে মার্কিন স্বার্থের পরিপন্থী সরকার ক্ষমতায় আসে, সেখানে সিআইএ রেজিমচেঞ্জের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। যেমন ইরান (১৯৫৩), গুয়াতেমালা (১৯৫৪), চিলি (১৯৭৩), বিশ্বজুড়ে বহু উদাহরণ আছে।

৩. গোপন অভিযান সমাজতন্ত্রসা প্রপাগান্ডা কৌশল

False Flag Operations হচ্ছে নিজেরাই হামলা বা বিশৃঙ্খলা ঘটিয়ে কমিউনিস্ট বা শত্রু পক্ষকে দায়ী করা (ব্লেইম শিফটিং)। মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ (Psychological Operations) যা ‘সাই অপস’ কৌশল বিশেষ করে প্রোপাগান্ডা, গুজব ছড়ানো, নেতাদের চরিত্রহনন, ভয়ের পরিবেশ তৈরি ইত্যাদি।

একটি প্রধান কৌশল গুপ্তচর নিয়োগ ও ইনফিলট্রেশন করা। কমিউনিস্ট পার্টি, সমাজতান্ত্রিক দল, ট্রেড ইউনিয়ন, ছাত্রসংগঠন, এমনকি সরকারী দপ্তরেও নিজেদের চর ঢুকিয়ে তথ্য সংগ্রহ ও সংগঠন ভাঙ্গার কাজ হয়।

৪. অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ও সহায়তার মাধ্যমে প্রভাব সৃষ্টি করা। মার্কিন অর্থনৈতিক সাহায্য দিয়ে বন্ধু রাষ্ট্রে ‘উন্নয়ন প্রকল্প’ করানো, এর বিপরীতে রাজনৈতিক আনুগত্য দাবি। (কাপ্তাই বাঁধ)

আফ্রিকা ও এশিয়ায় অনেক দেশে শ্রমিক আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ করতে সিআইএ গোপনে “anti-communist unions” গড়ে তুলেছে।

৫. বিশেষ প্রয়োজনে মিথ্যা তথ্য ও সংবাদ নিয়ন্ত্রণ (Disinformation) করে বিপ্লবীদের প্রতি নেতিবাচক প্রচারণা চালায়। সাধারণভাবে সংবাদমাধ্যম, সামাজিক বক্তৃতা ও শিক্ষাব্যবস্থার মধ্য দিয়ে “কমিউনিজম মানেই সন্ত্রাস, নির্যাতন, ধর্মহীনতা” এই ধরনের ধারণা ছড়িয়ে দেওয়া হয়ে থাকে।

 

বাংলাদেশে যা হচ্ছে, যেমন সাম্যবাদী দলের বিভক্তি, মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘দুই কুকুরের কামড়া কামড়ি’ তত্ত্ব, ১৯৭১ সালে বুদ্ধিজীবী হত্যা, আওয়ামীলীগের সৌদিমুখী হওয়া ও আভ্যন্তরীণ কোন্দল, জামাত শিবির ও জঙ্গিবাদের উথান, এবং পরিশেষে ২০২৪ এর রেজিমচেঞ্জ – অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের পরে বাংলাদেশের বিভিন্ন সময়ের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে সিআইএর ভূমিকা ছিল ও আছে।

বাংলাদেশে যে তরুণরা বিপ্লব করতে চান, আপনাদের মনে রাখতে হবে, বিপ্লবী আন্দোলন ও পার্টির আজকের দুর্দশার জন্য সিআইএর ভূমিকা আছে। পার্টির ভেতরে যে চর ঢুকানো হয় ও ইনফিলট্রেশন ঘটে, তা অনুসন্ধান ও এই ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাল্টা কৌশল প্রয়োজন।

 

আজিজুর রহমান আসাদ।