বিশ্বজুড়ে চলমান সংঘাত, নিপীড়ন এবং যুদ্ধাপরাধের লাগামহীন বিস্তারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পোপ লিও। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার এবং আইন লঙ্ঘনের ঘটনায় বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সংগঠনের নির্লিপ্ত অবস্থানকে ‘লজ্জাজনক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে ক্যাথলিকদের আধ্যাত্মিক এই নেতা বলেন, “এখনকার দিনে আন্তর্জাতিক আইন যেন আর কার্যকর নয়, বরং শক্তি প্রদর্শনের প্রতিযোগিতায় রূপ নিয়েছে মানবিকতা।” তিনি স্পষ্ট ভাষায় এটিকে জাতিগুলোর নেতৃত্বের জন্য ‘অযোগ্যতা এবং অপমানজনক অবস্থান’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
যদিও পোপ তার বক্তব্যে সরাসরি কোনো দেশের নাম নেননি, তবে এটি এমন সময় এসেছে যখন গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠেছে। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে মানবাধিকার সংস্থাগুলো পর্যন্ত অনেকেই এই হামলাকে ‘গণহত্যা’ বলে আখ্যা দিচ্ছেন।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। এই আইনগুলোর মূল উদ্দেশ্য—সংঘাত চলাকালীন সময়ে বেসামরিক মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু বাস্তবতা হলো, গাজা উপত্যকার অধিকাংশ এলাকা এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, এবং জনগণের বড় অংশ বাস্তুচ্যুত।
স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত গাজায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৫৬ হাজারের বেশি মানুষ। একে ‘যুদ্ধাপরাধ’ বলে স্বীকার করেছেন এমনকি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রাক্তন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারও।
যদিও আন্তর্জাতিক আদালতগুলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে—জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) পূর্ব জেরুজালেমসহ ফিলিস্তিনের অন্যান্য দখলদারিত্ব ‘অবৈধ’ ঘোষণা করেছে, এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে—তবু বড় বড় ইউরোপীয় দেশগুলো ইসরায়েলের সঙ্গে তাদের অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক ধরে রেখেছে।
মে মাসে প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিসের স্থলাভিষিক্ত হয়ে দায়িত্ব নেওয়ার পর মার্কিন বংশোদ্ভূত প্রথম পোপ হিসেবে পোপ লিও গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “এখনই সময়—যুদ্ধ থামাতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “গাজার আকাশ কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে। মায়ের কোলজুড়ে সন্তানের নিথর দেহ, ক্ষুধা-তৃষ্ণা আর বোমার শব্দের ভেতর আশ্রয়ের খোঁজে ঘুরে বেড়ানো মানুষগুলো যেন প্রতিনিয়ত প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছে আমাদের মানবতাকে।”
গাজার পাশাপাশি পোপ সুদান ও ইউক্রেনেও চলমান সংঘাত এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধেও মানবিক বিবেককে জাগ্রত করার আহ্বান জানিয়েছেন।