আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উত্তেজনা প্রশমনের অংশ হিসেবে ইরানকে ফের আলোচনার টেবিলে আনতে বড়সড় এক প্রস্তাব বিবেচনায় নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা শিথিল, বিদেশে আটকে থাকা অর্থ ছাড় এবং বিশাল অঙ্কের অর্থ সহায়তা দিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা।
বিষয়টি মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন নিশ্চিত করেছে, যাদের হাতে এসেছে অন্তত চারটি আলাদা সূত্র থেকে পাওয়া খসড়া পরিকল্পনা। এসব প্রস্তাব এখনো আলোচনার প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও একটি বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসন ছিল একদম অনড়—ইরান কোনোভাবেই নিজ দেশে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে না।
দুটি নির্ভরযোগ্য সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে, ইরানের জন্য তৈরি করা সম্ভাব্য চুক্তির একটি খসড়ায় ২০ থেকে ৩০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের বেসামরিক পরমাণু প্রকল্পের কথা বলা হয়েছে, যা শুধুই জ্বালানি উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হবে এবং তাতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধির সুযোগ থাকবে না।
সূত্র জানায়, এই বিষয়টি নিয়ে মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও উপসাগরীয় অঞ্চলের কয়েকটি মিত্র রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের মধ্যে হোয়াইট হাউসে একটি গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল—যেটি হয়েছিল ইরানে সম্ভাব্য মার্কিন হামলার একদিন আগে।
তবে এই অর্থ সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা। বরং যুক্তরাষ্ট্র চায়, উপসাগরীয় আরব মিত্ররাই এই উদ্যোগে মূল অর্থায়নের দায়িত্ব নিক।
আরেকজন ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তা জানান, “আমরা আলোচনার নেতৃত্ব দিতে রাজি, তবে আমরা সরাসরি অর্থ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি না। কেউ না কেউ তো বিনিয়োগ করবেই।”
খসড়া প্রস্তাবে আরও কিছু প্রণোদনার উল্লেখ ছিল, যেমন: কিছু নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং ইরানের বিভিন্ন বিদেশি ব্যাংকে আটকে থাকা প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার পরিমাণ তহবিল ব্যবহারের অনুমতি।
এই পুরো পরিকল্পনার লক্ষ্য একটাই—ইরান যেন পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের পথে না হাঁটে। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, ইরান চাইলে শান্তিপূর্ণ পরমাণু প্রকল্প চালাতে পারবে, তবে নিজেরা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে না। এর বদলে ইরানকে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম আমদানির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এই প্রস্তাবিত কাঠামোটি অনেকটাই সংযুক্ত আরব আমিরাতের মডেলের সঙ্গে মিল রয়েছে বলে জানান উইটকফ। একইসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা একটি দীর্ঘমেয়াদি, বিস্তৃত শান্তি-সমঝোতায় পৌঁছাতে চাই।”